পারভেজ রানা, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) চড়ারহাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১-এর এই দিনে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় শতাধিক নিরীহ জনতাকে। নির্মম এই গণহত্যার কথা মানুষ ভুলতে পারে নাই। অক্টোবর এলেই এখানকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নবাবগঞ্জের পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাটে (প্রাণকৃঞ্চপুর) ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরীহ সাধারণ নারী-পুরুষকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে একত্রিত করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হন। সেই শহীদদের গণকবর সংরক্ষণের জন্য শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। গণহত্যা দিবস স্মরণে সকাল ১০টায় চড়ারহাটের ১৯৭১ সালে গণহত্যার স্মৃতিসৌধে উপজেলা প্রশাসন, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও বিরামপুর ও ঘোড়াঘাটের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া এবং ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। বাদ জোহর চড়ারহাটসহ আশপাশের গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য ও গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া আহতরাসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া করবেন। আহতদের মধ্যে চড়ারহাটের হোমিও চিকিৎসক ডাঃ এহিয়া মণ্ডল বেঁচে থাকা অবস্থায় জানান, ৯ অক্টোবর বিরামপুর উপজেলার আলতাদিঘী নামক স্থানে গরুর গাড়িতে করে কয়েকজন খান সেনা বিরামপুর ক্যাম্পে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করে ৭জন খান সেনাকে হত্যা করে। খান সেনাদের সাথে ২ জন রাজাকারও ছিল। ওই রাজাকাররা খান সেনাদের হত্যা করার খবর বিরামপুর ক্যাম্পে জানায়। খবর পেয়ে ক্যাম্প কমান্ডার একজন মেজর প্রতিশোধ নিতে হিংস্র হয়ে উঠেন। তিনি তার ফোর্সদের নিয়ে ৯ অক্টোবর রাতেই পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাট(প্রাণকৃঞ্চপুর) ও আন্দোলগ্রাম(সারাইপাড়া) ঘেরাও করেন। ১০ অক্টোবর ভোর রাতে ওই গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষদের কাজের কথা বলে চড়ারহাটের একটি স্থানে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে ২ জন মহিলাসহ ১৫৭ জন শহীদ হন। শহীদদের সকলের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ৯৩ জন শহীদের লাশ শনাক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) গ্রামের ৬১জন এবং আন্দোলগ্রামের (সারাইপাড়া) ৩২ জন। ওই সময় এক কবরে একাধিক শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছিল। সেইদিনের ঘটনা ও শহীদদের স্মৃতি আজও তাদের আপনজনদের মাঝে নাড়া দেয়। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর দাবি ছিল গণহত্যা স্থানে একটি স্মৃতিমিনার করে দেওয়ার। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর ২০১১ সালে সেখানে একটি স্মৃতি মিনার তৈরির ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মিনারের কাজ শেষ হলে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দীন আহমেদ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অবধি দেশপ্রেম জাগাতে নবাবগঞ্জের চড়ারহাট এলাকার সেই নিবেদিত শহীদদের স্মৃতি চির জাগরুক থাক এ প্রত্যাশা এলাকার সকলের। এদিকে শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এলাকাবাসী চড়ারহাটে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। দিবসটি পালনে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মশিউর রহমান জানান।
মন্তব্য করুন