নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধান:
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে স্বামী মৃত্যুর পর সংসারের ঘানি টানিয়ে পরিবারে শতভাগ শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আদর্শ মা হিসেবে সফলতা ফিরে এনেছেন নবাবগঞ্জের জীবনযুদ্ধে জয়ি মা জোবায়রা। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষার মান উন্নয়নে যারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাদের মধ্য ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নের আখিরা গ্রামের জোবায়রা খাতুন অন্যতম। তার স্বামী লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যিনি একজন আদর্শ শিক্ষক এবং ভাল মানুষ হিসেবে এলাকায় অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুতে জোবায়রা খাতুন দিশেহারা হয়ে পড়েন। নাবালক তিন ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে আয়ের কোনপথই তার খোলা ছিল না। বড় ছেলে তখন সবেমাত্র তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করত, অন্য ছেলে মেয়ের কথা বলাইবাহুল্য। এমন ক্লান্তিলগ্নে তিনি মনোবল হারাননি। অদম্য সাহস আর শক্তিকে পুজি করে সন্তানদের শিক্ষিতকরে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। জোবায়রা খাতুন মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লিখাপড়া করলে ও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। সন্তানদের লিখাপড়ার হাতেখড়ি দেন তিনি নিজেই, হয়ে উঠেছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তাছাড়া স্বামীর রেখে যাওয়া অল্পকিছু জমিতে ফসলফলিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, সংসার চালানো যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে মনে করছিলেন হয়ত তিনি আরপারবেন না ঠিক তখন জোবায়রা খাতুনের বাবা মেয়ের পাশে দাড়িয়ে সন্তাদের মানুষ করার জন্য সহযোগীতা ছাড়া ও সাহস যুগিয়েছেন অতন্ত্র প্রহরীর মত। একটিমাত্র মাটিরচালা ঘরে চার সন্তানকে ঘিরেই ছিল তার সংগ্রাম। স্কুলে সন্তানরাও মেধার স্বাক্ষর রাখছিলেন। ধীরে ধীরে তার সেই ছোট্ট ঘর আলোকিত হয়ে উঠতে থাকে। স্কুলের শিক্ষক, এলাকাবাসীসহ সকলের স্নেহভালবাসা আর সহযোগীতায় চার সন্তানকেই তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। বড় ছেলে শাহজাহান আহম্মদ বিএসসি পাশ করার পর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ছোট ভাই বোনদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার কাজে মায়ের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এ ক্ষেত্রে তার ভূমিকাও এলাকায় একটি দৃষ্টান্ত।বর্তমানে তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেঝ ছেলে ডাঃ মোঃ শাহিনুর আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস (প্রাণিসম্পদ) ক্যাডার সাভিসে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর জেলার জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে ও বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের এমএসসি(এজি) পাশ করে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বীরগঞ্জ উপজেলা এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার (অতি:) সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একমাত্র মেয়ে সখিনা খাতুন ও বিএ পাশ করেন দিনাজপুর সরকারী মহিলা কলেজ হতে। বর্তমানে তিনি বিবাহিতা ও গৃহিনী এবং তার স্বামী পরিসংখ্যান বিভাগের একজন কর্মকর্তা। সে সময় এলাকায় এমন প্রতিকুল অবস্থায় শিক্ষার মানউন্নয়নে যারা অবদান রেখেছেন, অদম্য সাহস, প্রাণশক্তি আর নিরন্তর চেষ্টায় পরিবারকে শতভাগ শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলেছেন তারমধ্য জোবায়রা খাতুন অন্যতম। এলাকায় তিনি একজন অনুকরনীয় এবং আলোকিত মা হিসেবে পরিচিত ব্যাক্তিত্ব।
মন্তব্য করুন