নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধানI
কোভিড-১৯ এর আক্রমনে সারাবিশ্বের ন্যায় এর থাবা থেকে রক্ষা পায়নি গোটা দেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা সেবার কারণে দিন দিন ক্রমশ করোনা কমতে শুরু করেছে । গ্রীষ্ম কালীন এর চেয়ে শীতকালিন করোনার ঢেউ ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন উদ্দোগে সফল ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রীষ্ম কালীন সময়ে যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল তখন ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে অলস ও বেকার সময় অতিবাহিত না করে সুস্বাদু পুষ্ঠিকর ত্বীন ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নের মালারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মতিউল ইসলাম কোটি টাকার স্বপ্ন দেখছেন। বাড়ি সংলগ্ন ৫বিঘা জমি ক্রয় করে ঢাকা গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা নিয়ে এসে গড়ে তুলেছেন বাগানটি। বাগান মালিক জানান রোপনের ৩ মাসের মধ্যেই গাছে ফল দেখা দিয়েছে। পরিপক্ব হলেই ঢাকার বাজারে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ত্বীন ফল বিক্রি করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। মতিউল জানান, এ পর্যন্ত তার বাগানে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেলেই রপ্তানী যোগ্য ফলটি বাজারজাত করতে পারবেন তিনি বলে এমন ধারণা করেছেন সংবাদকর্মীদের নিকট। হাসারপাড়া গ্রামের শহীদ বীর মুক্তি যোদ্ধা গোলজার হোসেন সাবুর পুত্র কায়সার পারভেজ মিলন জানান, মতিউল ত্বীন ফলের বাগান করে এলাকায় যুবকদের এখন প্রেরনার উৎস। সমস্ত দিন অনেকেই আসছে এ বাগান দেখতে। যেভাবে বাগানে যাবেন: নবাবগঞ্জ সদর থেকে দাউদপুর বাজারে পৌছে পশ্চিম দিকে ৩ কিলোমিটার মালারপাড়া গ্রাম। সেখানেই খোলা জমিতে শোভা পাচ্ছে মতিউলের ত্বীন ফলের বাগান। বাগান মালিকের স্ত্রী মোছাঃ সেলিনা সুলতানা জানান, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঢাকায় ব্যবসা করত। করোনার কারণে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে অলস সময় না কাটিয়ে ত্বীন ফলের বাগান করেছেন। সুলতানা আরও জানান সেও বাড়িতে গৃহিনীর কাজের পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ করেছেন। নিম্নে এ ফলের পরিচিতি সহ উপকারিতা সন্নিবেশিত হল।
আশ্চর্জজনক ও বিস্ময়কর এক ফলের নাম ডুমুর বা ত্বীন ফল। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এই ফলের কথা উল্লেখ করেছেন । এর উপকারিতা সম্পর্কে মেডিক্যাল সাইন্সে প্রমানিত অনেক রিপোর্ট আছে। ত্বীন ফল দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে কার্বোহাইড্রেটেড, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনসহ নানাবিধ পুষ্টিগুণ। পুষ্টি গুণের পাশাপাশি এটির বহুবিধ ওষুধি গুণও রয়েছে। ভোক্তা চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে খাস ফুড আপনাদের জন্য সরবরাহ করছে সিরিয়া থেকে আমদানিকৃত সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ত্বীন ফল। কুরআনে যে তীনের কথা উল্লেখ রয়েছে সেটির বৈজ্ঞানিক নাম ঋরপঁং পধৎরপধ। ফাইকাস দলভুক্ত ৮০০ প্রজাতির মধ্যে এই তীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে স্থান। এটি দেশীয় কাকডুমুর থেকে বড়। স্বাদে সুমিষ্ট, অত্যধিক সুস্বাদু এবং রসালো। এককথায়, স্বাদে, ঘ্রাণে এবং পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফলের নাম তীন। তীন গাছ তিন থেকে দশ মিটার পর্যন্ত বড় হয়। ঘন এবং খসখসে পাতায় ভরপুর থাকে। উর্দুতে এর ফলকে আঞ্জির বলা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে এর চাষাবাদ হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় তুরস্কে। বৎসরে তিন লাখ টনের বেশি উৎপাদন হয় সেখানে। পরেই আছে মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, ইরান এবং সিরিয়া। তীনে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, আইরন ইত্যাদি। এতকিছু উপকারী উপাদান থাকলেও ক্যালরি এবং ফ্যাট নেই বললেই চলে। মোটা হয়ে যাওয়ার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পেটভর্তি খাওয়ার মতো একটি ফল তীন। বড় সাইজের একটি তীনে মাত্র ২ গ্রাম ফ্যাট থাকার কথা খাদ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ডায়েটেড এবং ফিট থাকতে চাইলে তীন সবচেয়ে কার্যকর ফল। আর এন্টিঅক্সিডেন্ট-এর তীনের চেয়ে ভালো ফল আর নেই বললেই চলে। প্রোস্টেট এবং জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক হচ্ছে তীন। ব্লাড প্রেসার এবং স্নায়ুরোগ কমাতে দারুণ কার্যকর। মায়ের বুকে দুধ উৎপাদনে তীনের জুড়ি মেলা ভার। পাইলসে ভোগা ব্যক্তিরা অসাধারণ ঔষধ হিসাবে তীন খেতে পারেন। গরুর দুধে এলার্জি থাকলে তীন খান। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, হাঁপানি রোগ, শ্বাসকষ্ট, ত্বক সমস্যা, চুলের রোগে তীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মহিলাদের এসিডিটি নির্মূল করে তীন। কিডনি, লিভার, ইউরিনারি ব্লাডারের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। শরীরের দুর্বলতা দূর করে আনে সজীবতা আর অদম্য শক্তি। তীন ফলের উপকারিতা লেখতে চাইলে শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) তীন ফল অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার সময় বলতেন, ‘এটি খাও, কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে।’ সুতরাং তীনের তরজমা শুধুমাত্র ডুমুর দিয়ে যারা করেন তারা একটা ভুল অর্থ দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। এ দেশীয় মানুষদের মগজে এমন একটি ফলের চিত্র এঁকে দেয়া হচ্ছে যা মানুষের খাওয়ার একদম অনুপযোগী। পাখপাখালির খাবার শুধু। এমনকি ডুমুরের নাম শুনলে অনেকে বিরক্তিভাব প্রকাশ করেন। তীনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ঋরম। আর এই তীন এদেশের মানুষের কাছে একদমই অপরিচিত এক ফল।
মন্তব্য করুন