নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধান >
‘নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান’। চার বছর আগে দাপ্তরিক মর্যাদা পেয়েছে। এখনও বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হয়নি। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আগের যে শালবন তার সঙ্গে বর্তমানে ঘোষিত জাতীয় উদ্যানের পার্থক্য নেই। ২০১০ সালের নভেম্বরে বনটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হলেও বাস্তবায়নের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হওয়ার পর স্থানীয়রা যে পরিমাণ খুশি হয়েছিলেন, দশ বছরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য (দিনাজপুর-৬) শিবলী সাদিক বলেন, উদ্যানের কাজ শুরুর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সংসদেও উত্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক আশ্বাস পেয়েছি। আশা করি, খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর যা হওয়ার কথা :বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন ১৯৭৪ইং (নং পবম/বন শা-২/০২/জাতীয় উদ্যান/১০/২০১০/৫১০) অনুযায়ী ৫১৭.৬১ হেক্টর এই বনের উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধাদির উন্নয়ন নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বনের ভেতরের পুকুরগুলোর পাঁচ হাজার ঘনফুট মাটি খননের কথা রয়েছে। যাতায়াতের জন্য দুই কিলোমিটার রাস্তা করার কথা থাকলেও আধা কিলোমিটার রাস্তা হওয়ার পর তা থেমে আছে। কাঁচা হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই রাস্তায় চলাচলের উপায় থাকে না। অথচ স্থানীয়দের মতে, বর্ষা মৌসুমেই বেশি উপভোগ্য এ উদ্যান ও পাশের বিলটি। আধুনিক পিকনিক স্পট, ওপর থেকে পুরো বন ও আশুড়ার বিলকে এক নজরে দেখতে ওয়াচ টাওয়ার, পশু-পাখি প্রজনন কেন্দ্র, বনের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ, দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এসবের কাজ শুরুই হয়নি। শোভাবর্ধনের জন্য গাছ লাগানো হলেও পরিচর্যার কারণে অনেক গাছ মারা গেছে। দিনাজপুর চরকাই রেঞ্জে শালবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবলের অভাবে পরিচর্যা সঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান একাধিক বন কর্মকর্তা। বনের ভেতরে নবাবগঞ্জ বিট কর্মকর্তার কার্যালয়টিও ‘জীর্ণ বাড়ি’র মতো হয়ে আছে। বনের পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষায় বনে পাতা সংগ্রহ, গাছ কাটা, বনের ভেতরে আগুন জ্বালানো, বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এসব কাজ এখনও চলছে বলেও অভিযোগ করেন বনের পাশের একাধিক বাসিন্দা। বন পরিদর্শনে গিয়েও এমন চিত্র নজরে পড়ে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। ঘোষণা হওয়ার পরও বাস্তবায়নে কেন সময় ক্ষেপণ হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, যে কোনো জাতীয় উদ্যানে ‘বৃহদাকার নির্মাণকাজ’ বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাই যতটুকু কাজ না করলেই নয়, সেটা করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের জন্য প্রস্তাবিত সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কিছু কার্যক্রম ধীরে ধীরে চলছে। আমরা বন অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। বনে যা আছে :পুরো বনটিই একটি বৃহৎ শালবাগান। এ ছাড়া উইপিং, বেলি, শেফালি, কামিনী, মুচণ্ডা, রাধাচূড়া, কাঁঠালিচাঁপা, রংগনসহ বনে প্রায় পাঁচ হাজার শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। বেতবাগান, বিরল প্রজাতির বাঁশবাগান, পশুখাদ্য বাগান ও ঔষধি বাগান শালবনটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। বনের গভীরে হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দ শরীরে শিহরণ এনে দেয়। বনের প্রধান আকর্ষণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আশুড়ার বিল। স্থানীয়দের মতে, বিশাল এ বিলের ৮০টি দ্বার বলেই এর নামকরণ হয়েছে আশুড়ার বিল। বিলের লাল পদ্ম, শাপলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ ফুল দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ। বিলের পাড়ে নতুন পাঁচটি বসার জায়গা করা হয়েছে। জাতীয় উদ্যানের বাস্তবায়নের কাজ শুরু না হলেও আশাহত হচ্ছেন না নবাবগঞ্জের বাসিন্দারা। স্থানীয় রুহুল আমিন জানান, জাতীয় উদ্যান ঘোষণা হওয়ার পর স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও এখনও বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।
মন্তব্য করুন