করোনা মহামারীতেও বসে ছিলনা তারা   বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছে মৃৎশিল্পীরা ।

Spread the love


নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধান >
করোনা মহামারীতেও বসে ছিলনা মৃৎশিল্পীরা। টাকার বিনিময়ে তাদের বাসনপত্র তৈরীর মাটি ক্রয় করে নিয়ে প্রযুক্তির এ যুগে জীবনযুদ্ধে বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রেখেছে তারা। দূর্যোগ, দুর্দিন, অভাব, অনটন কোনটাই এ শিল্পীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তবে সরেজমিনে গেলে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার সদরে মহিলা ডিগ্রী কলেজ যাবার পথে রাস্তার দুধারে দেখতে পাবেন মৃৎশিল্পীদের বসবাস। রাত-দিন অবিরাম গতিতে কেউ বা মাটির কাজ, বাসনপত্র তৈরী, রৌদ্রে শুখানো আবার আগুনে পোড়ানোর জন্য ভাটা তৈরীর কাজ। শিল্পীরা জানায়, বছর পরিক্রমায় বিভিন্ন তিথীতে তাদের মেলা দৈনিক কোথাও না কোথাও হাট-বাজার সহ কেউ বা ফেরি করে গ্রামে গ্রামে তাদের হাতের বানানো এ শিল্প বিক্রি করছেন।
ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের কদর কমছে দিন দিন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও চাহিদার স্বল্পতাসহ নানা কারণে বিলুপ্তের পথে এ শিল্প। তার মধ্যে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। মৃৎশিল্পীরা এখন অনেক কষ্টে আছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও উত্তরাঞ্চলের মৃৎ শিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের।
মৃৎশিল্পীরা জানান, কাঁচা মালের দাম বাড়তি হওয়ায় কারিগররা মাটির জিনিস তৈরি করে আশানুরূপ লাভও করতে পারছে না। তাই জীবন ও জীবিকার তাগিদে অনেকে পরিবর্তন করছে প‚র্ব পুরুষের ঐতিহ্য ‘কুমার পেশা’। বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজষপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। সে কারণে অনেক পুরোনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎ শিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার পরিবার যুক্ত আছে এই পেশায়। আগের মতো লাভ না হওয়ায় এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে কারিগররা। ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দিতে পারছেনা কর্মীদের। এতে একদিকে কারিগরেরা সংকটে পড়ছে পরিবার নিয়ে, অন্যদিকে দেশ হারাতে বসেছে নিজস্ব ঐতিহ্য। তাই মৃৎশিল্পকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তার দাবি মৃৎশিল্পীদের। মৃৎশিল্প বাঁচাতে এবং এর সাথে সংযুক্ত কয়েটি পরিবারের জীবিকা রক্ষায় এগিয়ে আসবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা সবার। এ ব্যাপারে একজন মৃৎশিল্পী বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রেখেছি। এই কুমোরপাড়ার আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে এই মৃৎশিল্পটি। “আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মৃৎশিল্পের বিদেশে বাজার তৈরি করা সম্ভব। মৃৎশিল্পের তৈরী হাঁড়ি-পাতিল ও থালা বাসনে খাবার খেলে কোন সমস্যা হয়না বলে মন্তব্য করেছেন নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহাজান আলী। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নবাবগঞ্জ উপজেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা শুভ্র প্রকাশ চক্রবর্তী জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে সমাজ সেবা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা সহ ঋণ কার্যক্রম রয়েছে। এ ধরণের কোন পেশাজীবি তার দপ্তরে আসলে তিনি সহায়তা করার চেষ্টা করবেন।

 


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।