করোনা ও লকডাউনের কারণে রপ্তানী হচ্ছে না দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের গ্রামের নারীদের তৈরী করা হেয়ার ক্যাপ ।

Spread the love


নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধান >
করোনা ও লকডাউনের কারণে রপ্তানী হচ্ছে না দিনাজপুরের নারীদের তৈরী করা হেয়ার ক্যাপ। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট ৩উপজেলায় বেকার নারীরা পরচুল বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরী করে দিনদিন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছিলেন। শুধু তাই নয় এ গ্রামের তৈরী করা এসব ‘হেয়ার ক্যাপ’ চীন সহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হতো। টাক মাথা’র জন্য ব্যবহার করা এসব পরচুল তৈরী করে গ্রামের শতাধিক হত দরিদ্র নারী ও স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করছেন। জানা গেছে, প্রায় ৬মাস আগে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের মতিহারা, ভাদুরিয়া, বিরামপুর সহ ঘোড়াঘেটের রানীগঞ্জ এলাকায় মোঃ তারেক হোসেন তার দুই বন্ধু মেসার্স সায়মা হেয়ার এন্টারপ্রাইজ উইকড এর উদ্যোগে। সেখানেই এলাকার শত শত বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পায় বাড়তি আয় সহ নতুন কর্মসংস্থানের। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন হেয়ার ক্যাপ তৈরীর প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের তৈরী করা হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের (প্রাক্তন ইউপি সদস্য ) মোঃ রাজু আহম্মেদ জানান, দেশে করোনা আর লকডাউনের কারণে বিদেশে হেয়ার ক্যাপ রপ্তানী করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে স্বল্পপরিসরে কারখানাগুলোতে কাজ চলছে এবং প্রোডাকশন হওয়া হেয়ার ক্যাপ সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায় এ শিল্প এলাকায় আসার করণে শিক্ষিত বেকার নারীরা বাড়তি আয় করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ঢাকা ওই কারখানার মালিকেরা চুক্তি ভিত্তিক প্রথম পর্যায় সামান্য কিছু চুল, সুই-সুতাসহ হেয়ার ক্যাপ তৈরীর যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে এসে গ্রামের হতদরিদ্র ২০ জন নারীকে ট্রেনিং দিয়ে পরচুল তৈরীর কাজে লাগিয়ে দেন। এখন তার কারখানায় ৭৫ জন নারী কাজ করছেন। এছাড়া নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক নারী তাদের বাড়িতেই পরচুল তৈরী করে তালেবের কাছে পৌছে দেন। কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে তিনি ৭ টি সাইজের তৈরী করা প্রায় ২’শ থেকে আড়াই’শ পরচুল সরবরাহ করেন । যার বাজার মুল্য দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। একজন দক্ষ নারী শ্রমিক দুইদিনে একটি করে পরচুল তৈরী করতে পারেন। প্রতিটি পরচুলের মজুরী সাইজ অনুযায়ী ৪ শ থেকে ৬ শ টাকা । মতিহারা গ্রামের হেয়ার ক্যাপ প্রশিক্ষণ কর্মশালার ম্যানেজার আজমত আলী জানান, প্রথমে নিজের সংসারের কথা চিন্তা করে হেয়ার ক্যাপ বা পরচুল তৈরীর কাজ নিয়ে আসলেও বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে পরচুল তৈরীর কাজ করতে। বর্তমানে আমার কারখানায় ৭৫ জন নারী এবং গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আরো প্রায় ৫০ জন নারী নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে পরচুল তৈরী করে আমার কাছে সরবরাহ করছে। এসব পরচুল তৈরীর জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আমাকে ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। মাস শেষে ঢকায় গিয়ে মজুরীর টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে নিয়ে এসে সকলকে নগদে পরিশোধ করি। এ কাজের জন্য সরকারী কোন সহযোগিতা পেলে আমার কারখানা আরো বড় করা সম্ভব হতো। এতে গ্রামের আরো অনেক হত দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। বর্তমানে দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় ৫হাজার বেকার নারী এ কর্মসংস্থানে যোগ দিয়ে ঘুচিয়েছে পরিবারের আর্থিক দৈন্যদশা। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ৫নং পুটিমারা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সরোয়ার হোসেন জানান, এ শিল্প বড় আকারে কাজ করতে পারলে গড়ে উঠতে পারে দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় শিল্প কারখানা। এদিকে দিনাজপুর ৬ আসনে সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিক তার নির্বাচনী এলাকায় হেয়ার ক্যাপ কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছেন।

 


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।