এম রুহুল আমিন প্রধান ।
দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান। অন্যান্য বনাঞ্চলের মতই শাল বনাঞ্চল উজার হতে হতেও দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ ও বিরল উপজেলার মতই এই নবাবগঞ্জ উপজেলায় শাল বনাঞ্চলের বেশ বড় একটা অংশ এখনো টিকে আছে। ১২৭৮ একর জায়গা নিয়ে এই বনাঞ্চল গঠিত। নবাবগঞ্জ শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বনের আরেকটি বড় সৌন্দর্য হচ্ছে, বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আশুরার বিল। বর্ষাকালে এই বিলে পানি কানায় কানায় পুর্ন থাকলেও শুকনো মৌসুমে এখানে স্থানীয় কৃষকরা ধান চাষ করে থাকেন। এ বিল থেকে প্রতি বছর প্রায় এক-দেড়শো মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যায়। দুপাশের বিস্তীর্ন শালবনের মাঝে এ বিলের উপর ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এক বিশাল শাল কাঠের সেতু নির্মান করা হয়েছে। যা সাধারন পর্যটককে আকৃষ্ট করেছে। আশুরার বিলের উপর এই কাঠের সেতুটি নির্মানের পর থেকেই প্রতিদিনই এখানে শত শত পর্যটক বেড়াতে আসেন।
শালবনের পাশেই অল্প দূরত্বের মধ্যেই একটি বৌদ্ধ বিহার আছে , যা সীতাকোট বিহার নামে পরিচিত। বিহারটি প্রায় বর্গাকৃতির এবং এ স্থাপত্যটির পরিমাপ পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫.২৩ মি এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৪.১১ মি। বিহারটির উত্তর এবং দক্ষিণ বাহুদ্বয় বহির্দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল। প্রশস্ত প্রবেশদ্বারের তোরণ কমপ্লেক্সটি উত্তর বাহুর মধ্যাংশে অবস্থিত। তোরণ অংশে রয়েছে দুটি প্রহরীকক্ষ। পূর্ব বাহুর উত্তরাংশে পেছনের দেওয়াল ভেদ করে একটি সম্পূরক প্রবেশপথ ছিল। দক্ষিণ বাহুর বহির্মুখী অভিক্ষেপটি ছিল একটি হল ঘরের মতো এবং সেই হল ঘরে ঢুকতে হতো ভেতর দিক দিয়ে।
প্রতিটি কেন্দ্রীয় কক্ষে ছিল একটি করে ইটের বেদি, যেখানে পূজার মূর্তি রাখা হতো। খুব সম্ভবত দক্ষিণ দিকের কেন্দ্রীয় কক্ষটি ছিল প্রধান মন্দির। প্রধান মন্দিরটির সম্মুখে স্তম্ভ শোভিত প্যাভিলিয়নটি মন্ডপ হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকবে। সীতাকোট বিহার আঙ্গিনার মধ্যবর্তী স্থানে কোন প্রধান মন্দির ছিল না। এখানে পাহাড়পুর, শালবন বিহার এবং আনন্দ বিহারের মতো ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির ফলকও অনুপস্থিত। তবে আকার আয়তনের দিক দিয়ে সীতাকোট বিহারের সঙ্গে বগুড়ায় অবস্থিত ভাসু বিহারের অনেক মিল রয়েছে।
আমরা নবাবগঞ্জ উপজেলায় আসার সময় ফুলবাড়ি ও বিরামপুর উপজেলার মাঝামাঝি জায়গায় চমৎকার বিশাল একটা বটগাছ দেখতে পাই। কালের পরিক্রমায় বড় বড় গাছ হারিয়ে গেছে, সচারচর এখন এতো বড় গাছ দেখতে পাওয়া যায় না।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত বাংলাদেশ অঞ্চলের শালবন, এক অখন্ড বনাঞ্চল হিসেবে কুমিল্লা থেকে সরাসরি ভারতের দার্জিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে বনের অধিকাংশ এলাকাই দখলকৃত। বাকি যেটুকু রয়েছে তার অবস্থা সন্তোষজনক নয়; গাছের সংখ্যা ও গুণগত মান উভয়েই নিম্নস্তরের। গোটা বনাঞ্চলের ভিতরে বিক্ষিপ্তভাবে স্থান পেয়েছে ধান ক্ষেত এবং অন্যান্য কৃষি ভূমি।
এখনো এই শাল বনের আশেপাশেই টিকে আছে সাওতাল , ওরাও সহ বেশ কিছু আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষ । তাদের বন নির্ভর জীবনযাপন এখন না থাকলেও তাদের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে।
মন্তব্য করুন