নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে এম রুহুল আমিন প্রধান
বাস্তুহারা, ভূমিহীন, গৃহহীন, বিধবা আদিবাসী নারী কাজলী মুর্মূ নিজের কিংবা পিতা-মাতার নামে আশ্রিত কোন জায়গা জমি ছিলনা তার। জন্মের পর থেকেই পাশর্^বর্তী জোসেফ মুর্মূ এর বাড়িতে একটু জায়গায় বসবাস করত কাজলী রানীর বাবা মা। পরিণত বয়স আসার আগেই বাবা হারায় কাজলী। মা নিলমনি মার্ডি ওই গ্রামের বুদু মুর্মূর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয় কাজলী মূর্মূর মায়ের। মানুষের বাড়িতে এবং মাঠে নারী হয়েও শ্রমিকের কাজ করে দুটি সন্তান নিয়ে পরিবার চলে তার। বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হলে ঘরে আসে দুটি সন্তান। স্বামীর সংসারে পারিবারিক কলোহ আর নির্যাতনের কারণে তালাকপ্রাপ্ত হন কাজলী। নিজ নামে জমি ক্রয় করবে কোথা থেকে। যা আয় উপার্যন করে দুমুঠো ভাত জোটাও কঠিন হয়ে যায় তার জন্য। এবিষয়ে উপজেলার ৮নং মাহমুদপুর ইউনিয়নের ভেবটগাড়ী আশ্রয়ন কেন্দ্রে গেলে অশ্রুশিক্ত চোখে কথাগুলো বলেছিলেন কাজলী মুর্মূ। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ইউনিয়নে ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জমি সহ উন্নতমানের পাকা ঘর পেয়ে একদিকে যেমন ৬৭৬টি পরিবারের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। অপরদিকে ওই ঘর পেয়ে সামাজিক ভাবে সম্মানিত হয়েছেন আশ্রায়ন বাসীরা। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে তহসিলদারদের মাধ্যমে কার জমি আছে আর কার নাই তা অধিকতর যাচাই বাছাই করে উপকার ভোগী নির্বাচন করে সে তালিকা উপজেলা পর্যায়ে অনুমোদন দিয়ে কর্তৃপক্ষের বরাবরে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলার ৫নং পুটিমারা ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা মোঃ সরোয়ার হোসেন জানান, সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ বলত ‘তোমাক ভোট দিয়ে কি হবে? হামার ভাঙ্গা ঘর তুলে দিমেন?’ আজ ২০২১ সালে গ্রামের মানুষের এ কথার জবাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান দেবার দায়িত্ব সরকারের কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরে যে সরকারগুলোই ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারা কেউই গৃহহীনদের আশ্রয়স্থল করে দিতে পারেনি। বর্তমানে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর বছরে এমন প্রকল্প গ্রহণ করা সত্যিই প্রশংশার দাবীদার। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ৯নং কুশদহ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সায়েম সবুজ এ প্রতিনিধিকে জানান, তার ৯নং কুশদহ ইউনিয়নে যারা শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী পালনে যারা ঘর পেয়েছে তারা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। উপজেলার ২নং বিনোদনগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ভিক্ষুক, অন্ধ, গৃহহীন সরকারের এ প্রকল্পের আওতায় এসেছে। ৮নং মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রহিম বাদশা জানান, দেশ স্বাধীনের পর কোন সরকারই গৃহহীনদের আবাসন সুযোগ সুবিধা দিতে পারেনি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ প্রকল্প হাতে নিয়ে বিশে^ রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। জেলা আর উপজেলা প্রশাসনের সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে মনিটরিং করার কারনে ঘরগুলো হয়েছে অত্যাধুনিক ও দৃশ্যমান। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নবাবগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সহ মোঃ আমির হোসেন জানান, আওয়ামীলীগ সরকার সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তাভাবনা করে দেশ পরিচলানা করে। একটি স্বাধীন দেশের মানুষ গৃহহীন থাকবে এটা হতে পারেনা। সেজন্য ভূমি ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ এটিই হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার।নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ সোম জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে গরীব দুঃখী অসহায় মানুষ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকত। উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে মনিটরিং করে মানসম্মত বাসস্থল নির্মানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। এদিকে কাজের গুনগত মান বজায় রাখতে দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিক তিনিও সরেজমিনে গিয়ে ঘর নির্মাণের কাজে ব্যাবহৃত সামগ্রী ইট সিমেন্ট, রড, বালু, খোয়া যাচাই বাছাই করে দেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোছাঃ পারুল বেগম জানান, অসহায় ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর প্রদনা করায় নিবাসীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সর্বক্ষন দোয়া করছেন তারা। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্ত (পিআইও) রেফাউল আজম জানান, ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তার এই মহান ব্রতকে সামনে রেখেই মুজিববর্ষে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারই পাচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পাবেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞ প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে নিজস্ব ঠিকানা অর্থাত্ জমির মালিকানাসহ সরকারি খরচে নির্মিত বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সামনে আরেকটি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন, যা নজিরবিহীন। প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি বাড়িতে থাকবে দুটি বেড রুম, একটা কিচেন রুম, একটা ইউটিলিটি রুম, একটা টয়লেট ও একটা বারান্দা। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা। প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে।
মন্তব্য করুন