মাদরাসা শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা ।

Spread the love

বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে ,(ক) সাধারন শিক্ষা যেখানে বাংলা, ইংরেজি গনিত , বিজ্ঞান ও আইসিটি পড়ানো হয় । (খ) মাদরাসা শিক্ষা ( আলিয়া মাদরাসা) যেখানে কুরআন, হাদিস, বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে পড়ানো হয়। (গ) কাওমি মাদরাসা শিক্ষা, যেখানে কুরআন ও হাদিস পড়ানো হয় বর্তমানে অবশ্য কিছু সংযোজন করা হয়েছে । কিন্তু আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাই হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে বহুমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা ।

শিক্ষা অর্জন করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এটা আমাদের বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সংবিধান স্বীকৃত। কারন একমাত্র শিক্ষাই পারে কোন দেশ, জাতি বা গোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল সোপানে নিয়ে যেতে । শিক্ষা ব্যতিত কোন ,জাতি বা গোষ্ঠী তাদের কাঙ্খিত স্থানে যেতে পারে না। আমরা যদি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই তাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় শতভাগ শিক্ষিত। এজন্যই তারা আজ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃত। আজ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আছে একচখা হয়ে , সরকার সাধরণত সরকারী প্রাইমারী, সহ স্কুল কলেজের পিছনে যা ব্যয় করতেছেন তার সিকিভাগ মাদরাসা শিক্ষার জন্যে ব্যয় করা হয়না । শত শত স্কুল কলেজ সরকারী করা হলেও একটি মাদরাসাও সরকারী করা হয়নি ।আজ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে মাসে মাসে টাকা দিচ্ছে খাবার দিচ্ছে এমনকি পোষাক ক্রয় বাবদ টাকা দিচ্ছে, কিন্তু একজন এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীর কি অপরাধ ছিলো সে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন ? সেকি এ দেশের নাগরিক নয় ? এর কি জবাব দিবেন কর্তা ব্যক্তিরা । পাশা-পাশী দুটি প্রতিষ্ঠান একটি এবতেদায়ী মাদরাসা অপরটি প্রাইমারী স্কুল সেই প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী স্কুল থেকে টাকা পাচ্ছে , খাবার পাচ্ছে আবার পোষাকও পচ্ছে , অপরদিকে এবতেদায়ী মাদরাসার ছাত্ররা এসব কিছু থেকে বঞ্চিত, অবহেলিত ,তাহলে কোন দুখে আজ ছোট ছোট কমলমতি বাচ্ছারা এবতেদায়ী মাদরাসায় যাবে । আবার জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা -২০১৮ (২৩নভেম্বর ২০২০ সংশোধিত । এই নীতিমালায় একটি ফাযিল মাদরাসায় মাত্র চারজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী অথছ একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে চারের অধিক আছে, উচ্চমাধ্যমিক বা ডিগ্রি কলেজের কথা বাদই দিলাম ,আবার অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারি সৃষ্ঠ পদগুলী নিয়ে কি ধুম্রজালই না সৃষ্ঠি করেছেন তা তারাই ভালো জানেন। তাছাড়াও সেই জনবল কাঠামোতে আরোও অনেক অনেক বিষয়ে বৈষম্য আছে।

শিক্ষাই আলো। সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সুশিক্ষিত জাতি আগামীর ভবিষ্যৎ। এ উপদেশবাণীগুলোর চেয়েও শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরনো। কারণ শিক্ষার ভালো ফল পাওয়ার পরই সম্ভবত এই উপদেশ বাক্যগুলোর জন্ম। মানবসভ্যতার বয়স যতদিন, শিক্ষার বয়সও ততদিন। কারণ মানুষকে সৃষ্টিকর্তা একজন জ্ঞানী ও খলিফা হিসেবে প্রেরণ করেছেন। উম্মতে মুহাম্মদির শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা হয় সৃষ্টিকর্তার বাণী- পড় তোমার প্রভুর নামে । রাসূল সা: ছিলেন প্রথম শিক্ষক এবং সাহাবিগণ প্রথম ছাত্র। এখান থেকে ইসলামী শিক্ষার ইতিহাস শুরু হয়। খোলাফায়ে রাশেদিন, উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং শিক্ষাব্যবস্থা একটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। মুসলিম শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসকগণ শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক অবদান রাখেন। তারা ইসলামী শিক্ষার একটি বুনিয়াদি কাঠামো দাঁড় করিয়ে ছিলেন। শুধু রাজধানী দিল্লিতেই এক হাজার মাদরাসা ছিল। ব্রিটিশ শাসনের আগে শুধু বাংলাতেই ৮০ হাজার মাদরাসা ছিল ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পরাজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের ইতি ঘটে। সূচনা হয় ইংরেজ শাসন। ইংরেজরা তাদের শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করা। উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। তাদের এ নীতি সফলতার সাথে বাস্তবায়ন হয়েছে। ব্রিটিশ আমাদের এ দেশ থেকে চলে গেছে সেই ১৯৪৭ সালে ঠিকই কিন্তু তাদের তৈরী শিক্ষাব্যবস্থা আজো বিদ্যমান আছে। বর্তমানে এ পাঠ্যসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন হলেও শিক্ষানীতির মূল কাঠামো আজো অপরিবর্তিত। কিন্তু আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব ব্যাপক। সর্বোপরি ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই সন্তানকে পরিপূর্ণ ইসলামী শিক্ষাদানের যথাযথ ব্যবস্থা করা নৈতিক দায়িত্ব। এটা নবুয়তি কাজের অন্তর্ভুক্ত।

পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে পরকালে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। “কাফেররা বলবে হে আমাদের পালনকর্তা, যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়“ (সূরা: হা-মীম-সিজদা,২৯ নং আয়াত)। অতএব আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষা এক অপরিহার্য মাধ্যম।

শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের কাজ হলো পরিপূর্ণ মানবসত্তার লালন করা, শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে বিকশিত মুক্ত সচেতন মানবসত্তাকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে উন্নত যোগসূত্র রচনা করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া যেমনটি প্রকাশিত হয়েছে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগগত এবং ইচ্ছাশক্তিসম্বন্ধীয় পরিবেশে। শিক্ষার উদ্দেশ্যই নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা।

মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত লোকেরা কৃষ্টি-সভ্যতা, দীন-ঈমান, ইজ্জত-আবরু ইত্যাদি সংরক্ষণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের অনৈতিক কাজে যেমন চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করার মতো নজির তেমন পাওয়া যায় না। মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরি করার পাশাপাশি মসজিদে জুমার খুতবা, ওয়াজ মাহফিল, সভা-সেমিনার ও ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সৎভাবে জীবনযাপন করার উপদেশ দেন। তাদের উপদেশ শুনে সাধারণ মানুষ সৎভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। অতএব সৎ ও আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষার ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমাদেরও উচিত মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা যাতে আমাদের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকে।

সর্বোপরি ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই সন্তানকে পরিপূর্ণ ইসলামী শিক্ষাদানের যথাযথ ব্যবস্থা করা নৈতিক দায়িত্ব।


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।