জয়পুরহাট প্রতিনিধি: ওমর আলী বাবু >
স্থানীয় ভূমিদস্যূ শাহিন-বারীক গংদের জুলুম-নির্যাতন, অবৈধ দখলদারিত্ব, অপহরণ; মিথ্যা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি মহোদয়, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ শান্তিপ্রিয় ও বিবেকবান মানুষের সহায়তা কামনা ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক দাবি করে আজ (২৭ আগস্ট) বেলা ১১ টায় জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে সদর উপজেলার পূর্ব সুন্দরপুর গ্রামের ভূক্তভোগী পরিবার।
লিখিত বক্তব্যে পরিবারের পক্ষে শামছুজ্জান বলেন, তারা জয়পুরহাট সদর থানার পূর্ব সুন্দরপুর গ্রামের মরহুম বস্কর আলী ফকিরের কন্যা তৈমন নেসার ওয়ারিস (নাতি-নাতনী)। মরহুমার নজির হোসেন ও নূরুল হুদা নামে ২ পুত্র ছিলেন (উভয়ই মরহুম)। নানা ও মাতার মৃত্যুর পর দুই তাদের নামে ওয়ারিস হিসাবে হাতিগাড়া মৌজার খতিয়ান নং ৪, পূর্ব সুন্দরপুর মৌজার খতিয়ান নং ৩৩ এবং জোরা মৌজায় খতিয়ান নং ২৭ এমআরআর রেকর্ড হয়। কিন্তু ভূমিদস্যূরা তাদেরকে জমির দখল দেয়নি। কিন্তু ১৯৯০ সালে দখলদাররা ইচ্ছাকৃতভাবেই শুধু পূর্ব সুন্দরপুর মৌজায় আরএস ৪৭৬ নং খতিয়ান প্রস্তত করে দখল ছেড়ে দেয়। কিন্তু হাতীগাড়া ও জোরা মৌজায় এমআরআর পর্চায় নাম থাকার পরও জরিপ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগসাজস করে দুই ভাইকে জমি থেকে বঞ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ব সুন্দরপুর মৌজার জমি বেদখল দেয়ার জন্য জরিপ বিভাগে ৩০ ধারায় অভিযোগ দাখিল করে। তারা যথারীতি অভিযোগের জবাবও দেন এবং তারা নিশ্চত ছিলেম যে, জরিপ বিভাগ তাদের জবাবে সন্তষ্ট হয়েছে। কিন্তু ফাইনাল পর্চায় দেখা যায় যে, এসব ভূমিদস্যূরা জরিপ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে আরএস-৪৭৬ খতিয়ানে তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা নিরুপায় হয়েই তড়িঘড়ি করে হাতীগাড়া মৌজায় রেকর্ড সংশোধনের জন্য ১২৪৫/২১ নং ল্যান্ডসার্ভে (দেওয়ানি মামলা) রুজু করেন। আর এই মামলা দায়েরের পর এসব ভূমিদস্যূরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে নানাবিধ হুমকী দিতে থাকলে জানমালের নিরাপত্তার চেয়ে ২/২/২২ তারিখে ৬৮ নং সাধারণ ডাইরী করা হয়। তারা গত গত ১৪/৭/২২ তারিখে তাকে অপহরণ করে ব্যাপক মারধর করে গুরুতর জখম করে এবং স্বজনদেরও নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। এতদসংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। আর এ সুযোগেই বিবাদীরা উল্টো ভিকটিমসহ তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ৪৪১ তাং ১৪/৭/২০২২ নং এফআইআর করে। ভিকটিম পক্ষ অহপহরণ ও মারধরের ঘটনায় থানায় এজাহার দিলে একদিন পর ৪৪৫ তাং ১৫/৭/২০২২ নং এফআইআর গ্রহণ করা হলেও এজাহারে অপহরণের ধারা অন্তর্ভূক্ত না থাকায় আসামীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। এর আগেই পূর্ব সুন্দরপুর ও জোরা মৌজার ভুল রেকর্ড সংশোধনের জন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে আরও একটি ১৬৬/২২ নং দেওয়ানী মামলা রুজু করা হয়।
এতে আরও জানানো হয়, বিগত ২/৮/২২ তারিখে ১৯৯০ পূর্ব সুন্দরপুর মৌজার আরএস-৪৭৬ নং খতিয়ান ভূক্ত জমি ভিকটিম পক্ষ রোপন করতে গেলে এসব ভূমিদস্যূরা সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের দখলভূক্ত সম্পত্তি জবর দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদা দাবির মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে জয়পুরহাট সদর থানার জিআর-৪৯৩/২০২২ (জয়ঃ) নং এজাহার দাখিল করে এবং আমার ভাতিজা গোলাম হাফিজ (এলএলবি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী) ও শাকিল (ইংরেজীতে অনার্স শিক্ষার্থী) এর হাত থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কল্পকাহিনী সাজানো হয়। ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা উল্লেখ করে এ বিষয়ে গ্রামবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাননীয় পুলিশ সুপার, জয়পুরহাট মহোদয় বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। (পত্র গ্রহণ স্মারক-৪৪০৩ তাং-৯/৮/২২) মূলত, এসব ভূমিদস্যূদের সকল অভিযোগই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এজাহারে এজাহারকারী দাবি করেছে, ‘আমি পৈত্রিক সূত্রে জয়পুরহাট থানাধীন পূর্ব সুন্দরপুর মৌজার খতিয়ান নং- ৪৭৬, দাগ নং- ১৪৬৩ ও ১৪৬২ আরএস-৪৭৬, রকম-ধানী, ৬২ শতক জমি প্রাপ্ত হইয়া ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি’। প্রকৃত পক্ষে উক্ত খতিয়ানে বাদীর দাদার নামে জমি রেকর্ড হয়েছে ( ভুলবশত, ১৬৬/২২ নং দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন) ৩৬ শতাংশ। বাদীর দাদার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। সে হিসাবে বাদীর বাবা ঐ জমির ১৪.৪ শতাংশ জমির মালিক। তিনিও মারা গেছেন। তার মা আছেন এবং তারা ২ ভাই ২ বোন। সে হিসাবে এজাহারকারী ঐ জমির মালিক ৪.২ শতাংশ। তাহলে সে কীভাবে ৬২ শতাংশ জমির মালিক হলো ? তার সহোদর ভাই মোসাদ্দেক হোসেন দিলিপ এ পর্যন্ত এই জমির মালিকানা দাবি করেন নি। ভুলবশত ঐ পর্চায় আরও অনেকেরই নাম যুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২ ভাই সাইফুল বারী ও জিয়াউল হকের নামে সর্বোচ্চ ৪১ শতক জমি রেকর্ড হয়েছে। তারা এই জমি নিজেদের বলে দাবি করেন না।
অভিযোগে বলা হয়, এসব ভ‚মিদস্যুরা পাঁচবিবি উপজেলার কামালপুর মৌজার একটি তামাদি দলিলের অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা ও অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা এই দলিলের সম্পত্তি মরহুম বস্কর আলী ফকিরের বলে দাবি করলেও তাদের সে দাবি ১৯ (১) মামলায় ৩১/১০/১৯৬০ এক আদেশে উল্লেখিত দলিল ‘বেনামী’ প্রমাণিত এবং সে জমি নজির হোসেন ও নূরুল হুদার বলে আদেশ দেয়া হয়েছে। তারা সে আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যায় নি। এসব ভূমিদস্যূরা পূর্ব সুন্দরপুর মৌজার আরএস খতিয়ান নং ৪৪৭ হালদাগ নং ১১৮৩ তে ৬ শতাংশ জমি আমাদের নামে রেকর্ড থাকলেও তারা এখনো সে জমি জবর দখল করে যাচ্ছে। তারা শুধু তাদের নয় অনেক লোকের জমিই পেশিশক্তির জোরে এবং ভ‚য়া রেকর্ডের মাধ্যমে জবর দখল করছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এসব ভূমিদস্যূরা অবৈধভাবে তাদের দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার জন্যই একের পর ভূক্তভোগীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। আবার উল্টো তাদের ওপর মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে নানাভাবেই হয়রানী করা হচ্ছে। অভিযোগকারীর দুই ভাইপো গোলাম হাফিজ( আনসার ভিডিপির জয়পুরহাট পৌর সভার ৯নং ওয়ার্ড দলনেতা) ও শাকিল জিআর-৪৯৩/২০২২ মামলায় জামিন পাওয়ার পর নতুন করে কঠোর ও জামিন আযোগ্য দিতে জেলে পাঠানো হবে বলে হুমকী দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এসব ভূমিদস্যূরা নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করার জন্যই ফৌঃ কাঃ বিধি ১০৭/১১৭ ধারায় ৬৫পি/২০২২ নং মামলা তাদের বিরুদ্ধে আনয়ন করেছে। অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। এই মামলার ১ ও ২ নং স্বাক্ষী বাদীর আপন চাচাতো ভাই এবং ৩ নং স্বাক্ষী বাদীর স্ত্রী। মামলার বর্ণিত ২ ও ৮ নং প্রতিপক্ষ পেশাগত কারণে ঢাকায় বসবাস করেন। তারা কথিত ঘটনার তারিখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কোন প্রশ্নই আসে না।
পরিশেষে বলা হয়, ‘ সাংবাদিক সমাজ জাতির জাগ্রত বিবেক। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি বিনীতি অনুরোধ করছি, আপনারা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধির কাছে প্রকৃত ঘটনা জানবেন। গত ২/৮/২২ তারিখের যে ঘটনার কথা উল্লেখ করে যে, জিআর- ৪৯৩/২০২২ নং এফআইআর করা হয়েছে তার সত্যাসত্য যাচাই করে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বিভাগের উপস্থাপন করুন। যাতে মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারে। আমরাও চিহ্নিত ভূমিদস্যূদের রেহাই পাই’।
মন্তব্য করুন