ওমর আলী বাবু,জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাট জেলার সর্বত্র শীতকালীন সবজি চাষের প্রস্তুতি হিসেবে এখন চারা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজির চারা বিক্রি করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। কৃষকরা তাদের জমিতে শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছেন।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখানকার কৃষকরা তাদের প্রয়োজনে চারা উৎপাদন করেন আবার অনেকেই কিনে জমিতে লাগান। বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজির এ চারা বিক্রি করে অনেকে লাখপতিও হয়েছেন। চলতি মৌসুমের জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলবে নভেম্বর মাস শেষ পর্যন্ত। এ চার মাস সময়কালে পলিথিনে মোড়ানো শেড তৈরি করে চার-পাঁচবার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা।
চারা প্রস্তুতকারী কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের জুলাই মাস থেকে শীতকালীন সবজি বীজতলা প্রস্তুত করে এতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ ও টমেটোর বীজ বপন করা হয়।ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে জমি থেকে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভালো মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা এক টাকা থেকে দুই টাকা এবং বাঁধাকপির চারা প্রকারভেদে এক টাকা থেকে দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জয়পুরহাট ছাড়াও আশে পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা এখানে সবজি চারা ক্রয় করতে আসেন।
চারা ক্রয় করতে আসা আক্কেলপুর উপজেলার কৃষক আনোয়ার বলেন,আমি আমার জমিতে বাঁধাকপি লাগাবো,তাই চারা কিনতে এসেছি।গত বছর এখান থেকে চারা কিনে বেশি ফলন পেয়েছি।
পাঁচবিবি উপজেলার উচাই এলাকার কয়েকজন ক্রেতা জানান, এখান থেকে চারা নিয়ে রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। সে জন্য তারা এখানে চারা নিতে আসেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার পূরানাপূল ইউনিয়নের হিলি রোড এলাকায় মাঠজুড়ে পলিথিনে মোড়ানো বীজতলা। এ সকল বীজতলায় বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা আসছেন চারা কেনার জন্য। বীজতলার মালিকরা তাদের জমি থেকে চারা তুলছেন বিক্রয়ের জন্য। কেউ কেউ বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদর উপজেলার পূরানাপূল এলাকার বীজতলার মালিক কৃষক মৃত্যুঞ্জয় সরকার বলেন, ‘আমি বিগত ২২ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। এ চারা বিক্রি করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। দুই বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে থাকি এবং এগুলো বিক্রি করে প্রতি বছর সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবার যতটুকু আবাদি জমি আছে সেখানে চারা কিনে নিয়ে এসে আবাদ করা লাগতো।তারপর সময় মত চারা পাওয়া যেতো না।তাই সময়ের ফসল অসময়ে লাগানোর জন্য ফলনও কম পাওয়া যেতো।তাই নিজেই অল্প জমিতে বীজতলা তৈরি করে চারা লাগানো শুরু করি। তার থেকে লাভবান হওয়ার কারনে এখন ব্যাবসা হিসাবে চারা উৎপাদন করি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন,স্থানীয় উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিস বিভিন্নভাবে কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।জয়পুরহাটে বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করা হয়েছে। সবজি চারা উৎপাদন লাভজনক ব্যবসা বলে কৃষকরা এদিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও চারার গুণগত মান বজায় রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন এবং নতুন নতুন জাত ও আগাম সবজির চারা উৎপাদনে পরামর্শ দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন