এম রুহুল আমিন প্রধান,স্টাফ রিপোটার ।
নভেম্বরে দেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার ৭ দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো রংপুর বিভাগেও মাঠে নেমেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো অভিযান চালাতে পারছে না।হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সাতদিনের মধ্যে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে নিয়ম না মেনে ইটভাটা গড়ে তোলার অপরাধে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।অভিযানে বিভাগের আট জেলার অবৈধ ৩৭টি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়। একই আরও ১১টি ইটভাটা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ১ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালত/স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গেল বছরের নভেম্বরে একটি এবং ডিসেম্বরে চারটিসহ মোট ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, বিভাগের আট জেলার ১ হাজার ১৮টি ইটভাটার মধ্যে শুধুমাত্র ১৫১টি বৈধ। বাকি ৮৬৭টি ইটভাটা নিয়ম না মেনে (ছাড়পত্র বিহীন) অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, আর সবচেয়ে কম লালমিনরহাটে।রংপুর জেলার ২৪০টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধই ২১২টি, বাকি ২৮টির ছাড়পত্র রয়েছে। লালমনিরহাটে ৫৪টির মধ্যে ৩৪ অবৈধ, দিনাজপুর ২১৫টির মধ্যে অবৈধ ১৬৫, কুড়িগ্রামে ১১১টির মধ্যে ৯০টি অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা। এছাড়া পঞ্চগড় জেলার ৪৯টি ইটভাটার মধ্যে বৈধতা নেই ৪২টির, ঠাকুরগাঁওয়ের ১১৯টির মধ্যে ১১৪টি অবৈধ, নীলফামারীর ৫৪টির মধ্যে ৫০টি অবৈধ এবং গাইবান্ধার ১৬০টি ভাটার মধ্যে ১৪৪টিই অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ অনুমোদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সরকারিবিধি অনুযায়ী এসব বিভাগের ৮৬৭ ইটভাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব ভাটায় বিধি লঙ্ঘন করে পোড়ানো হচ্ছে ইট, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, প্রভাব পড়ছে জীববৈচিতর্্েয।পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, একেকটি ইটভাটা একবার করে পরিদর্শন করলে পুনরায় সেটি পরিদর্শন করা তিন-চার বছরেও সম্ভব হয় না। ফলে অভিযানের পর যেসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা কিছুদিন পর আবার চালু হয়। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগে অধিদপ্তরে জনবল কম থাকার সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্র সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট উৎপাদন ও বিপনন করছে।জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষণ জরিপ, দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণসহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, প্রয়োজন অনুসারে বিধি লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, মামলা করা, পরিবেশ দূষণকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ বিভিন্ন কাজ নিয়মিত পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু জনবল সংকটে অনেক কাজই করতে পারছে না এই পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর কর্তৃপক্ষ।বর্তমানে রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। অথচ পরিচালক ও উপপরিচালকসহ অনুমোদিত ২০ পদের বিপরীতে সেখানে জনবল থাকার কথা ২৬ জন। বিভাগীয় কার্যালয়টিতে একমাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটসহ তিনজন অন্যত্র প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। অনুমোদিত ১৩ পদে কোনো জনবলই নেই। এই ১৩টিসহ ১৬ পদে জনবল শূন্য রয়েছে ১৭ জন।রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব) সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, জনবলের অভাবে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২২ সালে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। একই সময়ে ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৮৫টি অবৈধ ইটভাটার ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ১৩ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২টি অভিযানে ৪৬টি মামলা করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ১৮টি ইটভাটা আছে। এরমধ্যে ছাড়পত্র নেই ৮৬৭টি ইটভাটার। এসবের মধ্যে একেকটি ভাটা একবার করে পরিদর্শন করলে পুনরায় সেটি পরিদর্শন করতে তিন-চার বছরেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিযান পরিচালনার সময় অবৈধ কোনো ইটভাটা কিংবা পরিবেশের ক্ষতিকর অবৈধ অন্য কোনো স্থাপনা উচ্ছেদ করতে খননযন্ত্র অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের কার্যালয়ে নিজস্ব কোনো খননযন্ত্র নেই, এটি ভাড়া করে কাজ করতে হয়। জনবল সংকটসহ এমন নানা প্রতিকূল অবস্থাতে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে সাধ্যমত দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে খুব দ্রæত কিছু লোকবল নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন