ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মাইশা।

Spread the love

 

 

 

 

ওমর আলী বাবু, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

পড়াশোনা করছেন গ্রামের একটি স্কুলে। পড়তে পারেননি ভালো কোন স্কুলে। এরপরও টানা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। নিজের এই দক্ষতায় নিজের গ্রাম ছাড়িয়ে বহুদূর চলে গেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান মাইশা ফাহামিদা রিশা।

সে জয়পুরহাট সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী হেলকুন্ডা গ্রামের হতদরিদ্র মামুনুর রশিদের মেয়ে মাইশা। হেলকুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাএী মাইশা।তার বাবা পেশায় একজন দিনমজুর কৃষক । স্ত্রী বিলি বেগম স্থানীয় কুটির শিল্পের একজন কর্মী। । দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে মাইশা ফাহামিদা ছোট। ছোট বেলা থেকেই মাইশা ছিল মেধাবী।

দরিদ্র পরিবারে বাড়ির কাজের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ,সেই সঙ্গে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারাই স্থানীয়দের বাহবা পাচ্ছেন তিনি। ফসলি জমিতে বাবার কাছে খাবার দিতে গিয়েও মাইশা অনর্গল কথা বলেন ইংরেজিতে। উচ্চারণ এত চমৎকার যে, কথা শুনে চমকে যেতে হয়।

তবে মেয়ে চিকিৎসক-প্রকৌশলী কিংবা বড় চাকরিজীবী হোক, সন্তানকে নিয়ে এমন কোনো প্রত্যাশা ছিল না বাবা মামুনুর রশিদ ও মা বিলি বেগমের। চাওয়াটা ছিল খুব সরল। যেন পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে ছোট একটা চাকুরী করে তারপর ভালো একটা জামাই দেখে বিবাহ দিয়ে অন্যর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া। ইংরেজিতে সুন্দর করে কথা বলতে পারে দেখে আশায় বুক বাধে বাবা ও মায়ের। মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেন তারা।যাতে করে গরীব অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারে তার মেয়ে মাইশা।

মাইশা ফাহামিদা বিভিন্ন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তাদের ভিডিও দেখে দেখে নিজেও ইংরেজি বলার চেষ্টা করতে শুরু করেন।

মাইশা বলেন, ইংরেজি শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। বিভিন্ন ভিডিও ও ক্লাসে স্যারদের বক্তব্যে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি বা ইংরেজি ভাষা গুরুত্ব শুনতে শুনতে সেখান থেকে শেখা শুরু। শুরুতে একসময় আমার মনে হলো, ইংরেজিটা ভালোই বলতে পারছি। বাড়িতে বসে বসে বলা এবং ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা শুরু করি।

তিনি আর ও বলেন, বিভিন্ন ভিডিও তে অন্যদের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেই চর্চা করা শুরু করি। যখন নিজে নিজেই কথা বলা শুরু করলাম,তখন অনেক মানুষ মন্তব্য করেছিলো।কিন্তু সেই মন্তব্যের ঘরে মানুষজন এখন প্রশংসা করছে। আমি যে ইংরেজি জ্ঞান অর্জন করেছি, তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। সব শেষে বলব,চেষ্টা থাকলে সব সম্ভব।

ভবিষ্যৎতে কি হওয়ার ইচ্ছে আছে শুনতে চাইলে তিনি বলেন,আমার বাবা ও মা এর ইচ্ছে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার,সেই ইচ্ছেটা আমারও।আমি যেনো ডাক্তার হয়ে পরিবারের সহযোগিতার পাশাপাশি গরীব অসহায়দের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।

কথা হয় মাইশার বাবা মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেয়ে স্কুল থেকে আসার পর বাসায় কাজের পাচাপাশি ইংরেজি শিখতো।আমার মেয়ে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে শুরু করলে আমার স্বপ্ন বেড়ে যায়। সে ইংরেজি বলতে পারে বলে আমরা অনেক খুশি। সবাই দোয়া করবেন মেয়ের জন্য। মেয়ের জন্য দোয়া ও সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করছি।

 

মাইশার বড় ভাই রোহান বলেন, আমার একমাত্র বোন মাইশা আমাদের গর্ব। সহজ-সরল আমার এই বোন ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে ভাবতেই পারছি না। আজ অনেক ছেলে-মেয়ে তার ইংরেজিতে কথা বলা শুনতে আসে । তা দেখে অনেক ভালো লাগে।

একই কথা বলেন শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার তিনি বলেন, মাইশা আপুর ইংরেজি শুনতে খুব ভালো লাগে। আমরা তাকে দেখে চেষ্টা করছি শেখার। আমাদের এলাকার জন্য আইডল তিনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত বলেন, আমার ইউনিয়নে এই রকম মেধাবী মেয়ে আছে শুনে আমি তার সাথে দেখা করেছি,তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি।হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে মাইশা তাকে আমি আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করব পড়াশোনা যেনো সে ঠিকঠাকমত চালিয়ে যেতে পারে।

 


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।