ওমর আলী বাবু, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ ওমর আলী বাবুI
উচ্চ মূল্যের তিন ফসল উৎপাদন, আখের দাম কম, আখ চাষে সময় বেশি ও টাকা উত্তোলনে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। আখের চাষ কমে যাওয়ায় জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট সুগারমিলটি ৪শ কোটি টাকা লোকশানের বোঝা নিয়ে বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। মিলটি অল্প সময় চালু থাকায় অনেক শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে আখ চাষ বাড়িয়ে সুগারমিলটি বেশিদিন চালু ও টিকিয়ে রাখার আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
জয়পুরহাট সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালে ২১৬ একর জমি নিয়ে ২৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে শুরু হয় জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট সুগারমিল। চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে । এরপর থেকেই এ জেলা ও আশপাশের জেলাতে কৃষকরা ব্যাপক আখ চাষ করতো। চিনি উৎপাদনে এই সুগার মিলটি বর্তমানে রয়েছে দেশের শীর্ষে । আখ চাষ করতে ১২-১৪ মাস সময় লাগে কিন্তু অন্য তিন ফসল চাষে লাভ বেশি হওয়ায়, আখের দাম কম ও টাকা উত্তোলনে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। এক সময় সুগার মিলটি ৪ থেকে ৫ মাস চললেও বর্তমানে আখ চাষ কম হওয়াই গেল মৌসুমে মাড়াই কার্যক্রম চলেছে মাত্র ১৯ দিন। অল্প সময় মিলটি চলার কারণে সিজেন ভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে । আশঙ্কা করছেন দেশের অন্য সুগারমিলের মতো এই মিলটিও বন্ধ হতে পারে। এই মিলটি টিকিয়ে রাখার দাবি এলাকাবাসী ও সুগারমিল সংশ্লিষ্টদের।
আরও জানা যায়, আখের অভাবে মিলটি অল্প সময় চলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মিলটি বেশি দিন চালু ও টিকিয়ে রাখার জন্য সুগারমিল কতৃপক্ষ কৃষকদের নানা রকম প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও প্রণোদনা দিচ্ছেন। কিন্তু তবুও বাড়ছে না আখ চাষ। আখের দাম ১৮০ টাকার পরিবর্তে দাম বাড়িয়ে ২২০ টাকা প্রতি মণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আখ চাষীদের প্রতি একর জমিতে সার, বীজ, সেচে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ দিচ্ছেন মিল কতৃপক্ষ। এছাড়াও ১৬শ একর জমির জন্য ২২শ আখ চাষীকে ৪২ লক্ষ টাকা প্রণোদনা দিচ্ছেন তারা। এ দিকে আখের চাষ বাড়াতে জেলা কৃষি বিভাগ আখ চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসল চাষে পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করছেন। এ সব নানা পদক্ষেপ নিয়ে দেশের বৃহত্তম সুগারমিলটি এবছরের ডিসেম্বরে ২৫ দিন চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সুগারমিল কতৃপক্ষ। আখ চাষ বৃদ্ধি করে পরবর্তী মৌসুম গুলোতে আরও বেশি দিন মিল চালু রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে মিল কতৃপক্ষ।
জেলায় এবার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে ১৮০০ মেট্্িরক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ১১শ ৯২ মেট্রিক টন চিনি। সুপারমিলের চিনির দাম খোলা প্রতিকেজি ১০০ টাকা ও প্যাকেট ১০৫ টাকা। বিগত সময়ে ৩৩৫ কোটি টাকা লোকশান ছিল গত মৌসুমে সুগারমিলটির লোকশান দাড়িয়েছে ৪০০ কোটিতে।
জয়পুরহাটের দোগাছী, মঙ্গলবাড়ী,খনজনপুর, গাড়িয়াকান্ত, পাচঁবিবির সমসাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার আখ চাষী ও কৃষক শফিকুল, মোখলেস, শামছুল, রতন, মর্জিনা, বিউটি নয়া দিগন্ত কে বলেন, ধান, আলু ,সরিষা, পাট, বেগুন, পটল ও অন্যান্য সবাজী চাষ করলে ফসল তোলা মাত্র হাট বাজারে বিক্রি করলে আমরা সাথে সাথে টাকা পাই। বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফসল হয়। আর আখ চাষ করলে ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগে এবং দাম কম, সেই আখের টাকা ডবলার ও মোবাইলের মাধ্যমে অনেকদিন পর দেয়। আমরা এত কিছু বুঝিনা ফসল বিক্রি করব সাথে সাথে টাকা নিব অন্য ফসলের মত। এজন্য আমরা আখ চাষ করিনা।
জয়পুরহাট সুগারমিলের বিভিন্ন শ্রমিক কর্মচারীরা নয়া দিগন্ত কে বলেন, আখের অভাবে এবার মাত্র ১৯দিন সুগারমিল চলেছে। দেশের অনেক কয়টি সুগারমিল বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের সুগারমিলটি কখন যে বন্ধ হয় এ নিয়ে আমরা দূশ্চিন্তায় আছি। সিজেন ভিত্তিক আমরা যারা চাকুরী করি মাত্র ১৯ দিনে কয় টাকা বেতন পাই। সেই টাকা দিয়ে কিভাবে সংসার চলে, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া কিভাবে করাই। আমরা চরম কষ্টে আছি।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুজিবুর রহমান নয়া দিগন্ত কে বলেন, আখচাষীরা যাতে লাভবান হতে পারে এজন্য আখ চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল চাষের জন্য নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জয়পুরহাট সুগারমিল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান নয়া দিগন্ত কে বলেন, গত মৌসুমে ১৮০ টাকা মণের পরিবর্তে এবারে আখের মুল্য প্রতিমণ ২২০ নির্ধারণ করা হয়েছে। আখচাষীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, ঋণ সহায়তা ও নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে আখ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে বেশিদিন মিলটি চালানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আসছে মৌসুমে ২৫ দিন মিল চালানোর সিদ্ধান্ত আছে। ধীরে ধীরে আরও বেশি দিন মিল চালানোর জন্য আখের দাম বেশি করা সহ বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন