ইন্ডিয়ান বুক অব রেকর্ড হোল্ডার অ্যাওয়ার্ড পেল চলো স্বপ্ন ছুঁই এর জিসান।

Spread the love

লালমনিরহাট থেকে এ,এল,কে খান জিবু #
সাহসীকতার সাথে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারীর একজন যোদ্ধা হিসেবে উত্তরবঙ্গের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চলো স্বপ্ন ছুঁই এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মুহতাসিম আবশাদ জিসানকে  ইন্ডিয়ান বুক অব রেকর্ড আয়োজিত ইন্ডিয়ান হিউম্যানটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড  প্রদান করা হয়।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তাকেই এই অ্যাওয়ার্ড এ ভূষিত করেন ইন্ডিয়ান বুক অব রেকর্ড  । বৈশ্বিক মহামারির কারণে  একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ ই ডিসেম্বর কতিপয় স্বপ্নবাজ তরুণ তরুণীর হাত ধরে পথ চলা শুরু হয় “চলো স্বপ্ন ছুঁই” এর। তবে অন্যান্য সময়ের পাশাপাশি করোনার শুরু থেকে সম্মুখ সমরে নেমে পড়ে “চলো স্বপ্ন ছুঁই” এর সৈনিকরা। ত্রাণ কার্যক্রম দিয়ে শুরু হলেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় জন সচেতনতা বাড়াতে সারা শহর জুড়ে জীবানু নাশক স্প্রে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দোকানপাটের সামনে নিরাপদ দুরুত্বের সুরক্ষা ছক অঙ্কন, দেয়াল লিখন পোস্টারিং ইত্যাদির পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পথচারীদের মাঝে নিয়মিত মাস্ক, স্যানেটাইজার, হ্যান্ড ওয়াস ইত্যাদি বিতরণ করে তারা।”কারুপণ্যের” সহায়তায় করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ২৭,০০০ মাস্ক বিতরণ করা তারা। সেই সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে স্যানেটারি ন্যাপকিন বিতরণ, রেষ্টুরেন্টের ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপন করে “চলো স্বপ্ন ছুঁই “।
উল্লেখ্য যে করোনায় লালমনিরহাটসহ অন্যান্য এলাকার কর্মহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে এখন পর্যন্ত  ৪৫০০ এর বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে তারা। পরবর্তীতে তারা করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া সাধারণ মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতা ফিরিয়ে দিতে “স্বপ্নপূরণ”  নামে একটি ইভেন্ট শুরু করে যা এখনো চলমান। এর মাধ্যমে কর্মক্ষম মা-বোনদের সেলাই মেশিন, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি প্রদানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যাবসায় সহযোগিতা করছে “চলো স্বপ্ন ছুঁই”। এখন পর্যন্ত ৭০ জন নারীকে সেলাইমেশিন সহ শতাধিক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে ” চলো স্বপ্ন ছুঁই “।  তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবক রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার স্বনামধন্য ডাক্তার পরিবাররের মরহুম ডা. সামসুল হক এর নাতি এবং আবু হেনা মোঃ শাহনেওয়াজ ফুয়াদের এর বড় ছেলে। তারা দুই ভাই, ছোট ভাই ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ রংপুরে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা রংপুর রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে এবং মা বিসিক এর একটি প্রজেক্ট সিরোটসি ট্রাষ্ট এ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। জিসান ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কিছু করার। সপ্তম শ্রেণি থেকে নিয়মিত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে কাজ করতেন জিসান, শুরুটা সেখান থেকেই।স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ইচ্ছাটা তার ছোট থেকেই ছিলো। শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যাননি, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য অবিরাম কাজ করেছেন এবং এখনও কাজ করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত আছেন। সাহসীকতার সাথে করোনা মোকাবিলা করার এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ন্যাশনাল করোনা ওয়ারিওর অ্যাওয়ার্ড, হিউম্যান রাইটস নোবেল অ্যাওয়ার্ড – ২০২১, ডাব্লিউএসি আইকন অ্যাওয়ার্ড-২০২১,ডাব্লিউএসি স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০২১, ইয়ুথ আইকন অ্যাওয়ার্ড,  গ্লোবাল হিউম্যানিটি অ্যাওয়ার্ড-২০২১, গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স-২০২১, বেস্ট ইনোভেটিভ আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড -২০২১, বেস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার অ্যাওয়ার্ড -২০২১, কোভিড-১৯ হিরো অ্যাওয়ার্ড – ২০২০ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। তার কার্যক্রম দিয়ে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম তুলে ধরেছেন। তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবক শুধু চলো স্বপ্ন ছুঁই এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, গড়ে তুলেছেন আরো কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন,  যুক্ত আছেন অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। লিও ক্লাব অব দুর্বার বাংলাদেশ,  ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন প্রোজেক্ট,  অ্যাকসেস টু হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ,  ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ সহ আরো অনেকগুলো সংগঠন এর সাথে জড়িত এই তরুণ।মুহতাসিম আবশাদ জিসান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, “আমার সংগঠনের সহযোদ্ধারা সাথে না থাকলে আমার এই অর্জণ সম্ভব হতো না, এই অর্জণ আমার একার নয় নয়, আমার এই অর্জণ সংগঠনের সকল সহযোদ্ধাদের।  সেই সাথে যেসব শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এতদূর আগাতে পারতাম না। পড়াশুনা করি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় পড়াশুনা করি আমরা। সামাজিকভাবে আমাদের একটা দ্বায়বদ্ধতা থেকে যায়, সেই দায়বদ্ধতা থেকে হলেও আমাদের সবার এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসা উচিত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারছি।  বহিঃবিশ্বে বিভিন্ন প্রোজেক্টে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। ৯ বছরের স্বেচ্ছাসেবী জীবনে পেয়েছি অনেক সম্মান, অনেক মানুষের দোয়া, ভালোবাসা। নতুন এই প্রাপ্তিটাও কাজের স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ। “। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন পূরণই আমাদের কাজের লক্ষ্য। অসহায় মানুষদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজে করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের এই উদ্যোগে উপকার ভোগ করেছেন সমাজের অসংখ্য মানুষ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন ভবিষ্যতে যেনো আমি এভাবেই মানুষের পাশে দাড়াতে পারি”।

Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।