মোঃ রেজওয়ানুর রহমান শুভ
বাস্তুহারা, ভূমিহীন, গৃহহীন, বিধবা আদিবাসী নারী কাজলী মুর্মূ নিজের কিংবা পিতা-মাতার নামে আশ্রিত কোন জায়গা জমি ছিলনা তার। জন্মের পর থেকেই পাশর্^বর্তী জোসেফ মুর্মূ এর বাড়িতে একটু জায়গায় বসবাস করত কাজলী রানীর বাবা মা। পরিণত বয়স আসার আগেই বাবা হারায় কাজলী। মা নিলমনি মার্ডি ওই গ্রামের বুদু মুর্মূর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয় কাজলী মূর্মূর মায়ের। মানুষের বাড়িতে এবং মাঠে নারী হয়েও শ্রমিকের কাজ করে দুটি সন্তান নিয়ে পরিবার চলে তার। বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হলে ঘরে আসে দুটি সন্তান। স্বামীর সংসারে পারিবারিক কলোহ আর নির্যাতনের কারণে তালাকপ্রাপ্ত হন কাজলী। নিজ নামে জমি ক্রয় করবে কোথা থেকে। যা আয় উপার্যন করে দুমুঠো ভাত জোটাও কঠিন হয়ে যায় তার জন্য। এবিষয়ে উপজেলার ৮নং মাহমুদপুর ইউনিয়নের ভেবটগাড়ী আশ্রয়ন কেন্দ্রে গেলে অশ্রুশিক্ত চোখে কথাগুলো বলেছিলেন কাজলী মুর্মূ। তার মা নিলমনি মার্ডি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে পাকা ঘর না পেলে হয়তো সে সহ তার অসহায় মেয়ে থাকতে হত পরের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সারাদেশের ন্যায় সরকারি ভাবে ৪কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপজেলায় ৪শত প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সরকারি জমিতে গৃহ নির্মাণের কাজ চুড়ান্ত ভাবে শেষ হয় বলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আল মামুন। তিনি জানান সরকারি নির্দেশনার আলোকেই ওই পরিবারগুলোকে ঘরের জমি বন্দোবস্ত সহ চাবি হস্তান্তর করা হয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভোধনের দিনেই। ৮নং মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহিম বাদশা জানান, নিলমনি মার্ডি ও তার মেয়ে ১টি ঘরের জন্য দীর্ঘদিন থেকে আবেদন করে আসছিল। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে সরকারের ঘোষিত গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতাভূক্ত হয় মা মেয়ে দুজনেই। কাজলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ধার দেনা করে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করে সংসার পরিচালনার জন্য ওই ঘরেই শুরু করেছে দর্জি পেশার কাজ। এখন ঘর হয়েছে ১টি গাভী গরু পেলেই লালন-পালন করে তার পরিবার চলবে এমন দাবি করেছেন এ প্রতিবেদকের নিকট। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বহী অফিসার অনিমেষ সোম জানান, সরকারি ঘর নির্মাণে ও বিতরণে কোন ধরণের অনিয়ম দূর্নীতি সহ্য করা হবেনা। সরকারি নির্দেশনার আলোকেই আশ্রয়নের ঘর নির্মাণ হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেফাউল আজম জানান, ৪শ ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে আবার ৪শ ঘর নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য আশ্রয়ন কেন্দ্রের ঘরগুলো বিধি অনুযায়ী নির্মাণ করতে দিনাজপুর ৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক সরেজমিনে তদন্ত করেছেন।
মন্তব্য করুন