এ, এল, কে খান জিবু# লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
গত কয়েক দিন ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তার পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির চাপ সামাল দিতে ভারতের গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজের সব গেটই খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ অংশের দোয়ানি -ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এদিকে লালমনিরহাট জেলার ছোট বড় সব নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার চরএলাকায় দেখা দিয়েছে অস্থায়ী বন্যা। জানা গেছে, পানির চাপ থেকে ব্যারেজকে রক্ষা করতে ভারত তাদের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে।ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটানে প্রচুর ভারী বৃষ্টির কারণে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজের লক গেটে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে সব গেটই খুলে দেয় ভারত। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ অংশে তিস্তার বুকে চর দেখা যাচ্ছিল। হাঁটুও ভিজত না পানিতে। তবে এখন পানিতে পরিপূর্ণ তিস্তা। গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে আরো বাড়তে পারে তিস্তার পানি এমনটাই আশংকা করছে পানি উন্নয়ন বোড কর্তৃপক্ষ । এদিকে, তিস্তা, সানিয়াজানসহ সবকটি নদিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে, এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।এলাকা ঘুরে ও সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার দোয়ানী তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে গোকুণ্ডা এলাকায় তিস্তার ভাঙ্গন প্রবল আকার ধারণ করেছে । ইতি মধ্যে নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক ঘর বাড়ী ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।এ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গতবুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলার হাতীবান্ধার দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার দশমিক ০৭ মিটার ওপরে ওঠে আসলেও সোমবার (৫ জুলাই) সকালে তা বিপদ সীমার দশমিক ১২ সেমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল বাড়ছে যা, আগামী শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বাড়া আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে যা বাড়তে পারে।দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বাড়ছে যা, আগামী শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী শনিবার নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম,আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের স্থানগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এর ফলে এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে বুধবার ৭৫টি পয়েন্টের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে ২২টি পয়েন্টের পানির সমতল। অপরিবর্তিত আছে তিনটির পয়েন্টের পানির সমতল আর একটি পয়েন্টের এখনো তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।এদিকে ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটানে ভারী বৃষ্টির কারণে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজের কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে করে উত্তরাঞ্চলেও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মন্তব্য করুন