প্রশিক্ষণ আর সরকারি ভাবে প্রণদনা পেলে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে নবাবগঞ্জের ত্বীন ফল, ড্রাগন ও থাই পেয়ারা চাষীরা ।

Spread the love

মোঃ রেজওয়ানুর রহমান শুভ

কোভিড-১৯ আক্রান্তে যখন গোটা পৃথিবী ঠিক সেসময় বসে ছিলেন না ত্বীন ফল, ড্রাগন ও থাই পেয়ারা চাষীরা। এ দূর্যোগে ফল উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বাগান মালিকেরা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন শোভা পাচ্ছে বিদেশের মরু প্রান্তের দেশের ফল ত্বীন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নের মালারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে মতিউল ইসলাম বাড়ি সংলগ্ন ৫বিঘা জমি ক্রয় করে ঢাকা গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা নিয়ে এসে গড়ে তুলেছেন ত্বীন ফলের বাগানটি। বাগান মালিক জানান রোপনের ৩ মাসের মধ্যেই গাছে ফল দেখা দিয়েছে। পরিপক্ব হলেই ঢাকার বাজারে ১ হাজার টাকা কেজি দরে ত্বীন ফল বিক্রি করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। মতিউল জানান, এ পর্যন্ত তার বাগানে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেলেই রপ্তানী যোগ্য ফলটি বাজারজাত করতে পারবেন তিনি বলে এমন ধারণা করেছেন সংবাদকর্মীদের নিকট। হাসারপাড়া গ্রামের শহীদ বীর মুক্তি যোদ্ধা গোলজার হোসেন সাবুর পুত্র কায়সার পারভেজ মিলন জানান, মতিউল ত্বীন ফলের বাগান করে এলাকায় যুবকদের এখন প্রেরনার উৎস। সমস্ত দিন অনেকেই আসছে এ বাগান দেখতে। যেভাবে বাগানে যাবেন: নবাবগঞ্জ সদর থেকে দাউদপুর বাজারে পৌছে পশ্চিম দিকে ৩ কিলোমিটার মালারপাড়া গ্রাম। সেখানেই খোলা জমিতে শোভা পাচ্ছে মতিউলের ত্বীন ফলের বাগান। এদিকে উপজেলার ১নং জয়পুর ইউনিয়নে স্ব-উদ্যেগে কোটি টাকার অর্থায়নে ড্রাগন চাষের উদ্যেগ আর থাই পেয়ারার বাগান করে অবসর জীবনের ভাগ্যের চাকা ফিরিয়েছেন জহিরুল ইসলাম। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, কৃষি খবর ও বিদেশ থেকে সরেজমিনে দেখে এসে এই অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক উত্তর জণপদের ড্রাগন ফলের বাগানের কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। জয়পুর ইউনিয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে ড্রাগন ফলের বাগানের কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান- জহিরুল থাই পেয়ারা চাষ করে ইতিমধ্যেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। এরপরেও ড্রাগন ফল চাষের যে উদ্যেগ নিয়েছে তা বড় প্রায়াস। তাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হবে।
জহিরুল জানায়- উত্তরজনপদে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন চাষ নাই বললেই চলে। এ বাগান সফল করতে কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে নিজের ১১বিঘা ও অন্যের ১৭ বিঘাসহ মোট ২৮ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন থাই পেয়ারার বাগান। চারা লাগানোর ৬ মাস পর থেকেই বাগানে পেয়ারা ধরতে শুরু করে। সাড়ে চার হাজার পেয়ারা গাছের সবগুলোতেই ব্যাপকহারে পেয়ারা ধরেছে। ইত্যোমধ্যে বাগসন থেকে ৬৩ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকার ফল বিক্রি করে এলাকায় সফল বাগান মালিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। পেয়ারা বাগানের নাম দিয়েছেন ওয়াসী গ্রীন এগ্রিকালচারাল জোন। পেয়ারা গাছের ফাঁকে ফাকে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি সফেদা ও মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেছেন। বর্তমান সেগুলোতে ফল এসেছে। এদিকে মো. জহিরুল ইসলামের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। জহিরুল ইসলাম বলেন, তার বাগানের পেয়ারা ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত। ফুল থেকে গুটি হলেই প্রতিটি পেয়ারা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যাগিং পদ্ধতির কারণে গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও পেয়ারা থাকে বিষমুক্ত। দেখতে সুন্দর পেয়ারার স্বাদও মিষ্ট। বাগান থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে পেয়ারা কিনে নেন রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, খিলগাঁও, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ বছর বাগানের পেয়ারা অন্তত কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করেছন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জহিরুল ইসলামের পেয়ারা বাগানের সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য এলাকাতেও গড়ে উঠতে শুরু করেছে পেয়ারা বাগান। এলাকার মাটি ফল বাগানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার উৎপাদিত ফল সুস্বাদু এবং দেশের সব স্থানেই চাহিদা থাকায় লোকসানের ঝুঁকি কম। ফল চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার ৩নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বামনগড় এলাকায় বারি-৪ জাতের আম ও আপেল-১০, বলসুন্দরী কুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মোঃ রফিকুল ইসলাম।


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।