এম রুহুল আমিন প্রধান
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে উপজেলার ৬টি স্থানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও জনতা ব্যাংক এর আর্থিক অনুদানে উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নে খয়েরগুনি গণহত্যা স্মৃতিফলক, দাউদপুর স্মৃতিফলক, মতিাহারা গণহত্যা স্মৃতিফলক ২০২২ সালের ২৬শে মার্চ এ নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। আজ ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধকালীন স্মৃতিফলক গুলো উদ্ভোধন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে হাজির হয়ে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে স্মৃতিফলক উদ্ভোধন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ সোম এর সভাপতিত্বে উদ্ভোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিক, জনতা ব্যাংক লিঃ এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম মাহফুজুর রহমান ডাবলু, ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ, দিনাজপুর সিবিএ অর্থসম্পাদক আদিউজ্জামান তোতা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতাউর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শুভ্র প্রকাশ চক্রবর্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিদ্ধো দবিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, ৯নং কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সায়েম সবুজ, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম রুহুল আমিন প্রধান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তানভীর আহমেদ এর স্বত্বাধীকারী মোঃ মতিবুর রহমান, থানা অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ডা. মোশারফ হোসেন সহ অংগ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা সদরে ৭১ মঞ্চ উদ্ভোধন শেষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম মাহফুজুর রহমান ডাবলু, থানা অফিসার ইনচার্জ কে সম্মাননা স্মাকর দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ সোম জানান, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর যখন জানতে পারলাম উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা আজও আলোচনা করলে বেদনাদায়ক মনে হয়। এরপর দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিকের নির্দেশে ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের তথ্য অনুযায়ী ওই জায়গাগুলো শনাক্ত করে স্মৃতিফলক নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করি। দীর্ঘ ৪মাস পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধকালীন স্মৃতি ধরে রাখতে আলোর মুখ দেখে নির্মাণ শৈলী অবশেষে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাসে উদ্ভোধন হলো স্মৃতিফলকগুলো। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান জানান, আমি ছোট বেলায় প্রত্যক্ষ উপস্থিত থেকে যুদ্ধ দেখেছি। এ যুদ্ধে আমার পিতা লোকমান হোসেনকে রাজাকার পাকিস্তানি সেনারা হেয়াতপুর স্কুলের একটি ঘরে ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখে। তখন আমি শিক্ষার্থী। কয়েকদিন পর শুরু হবে পরীক্ষা। বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে এ ব্যথায় অনেকটা কাতর। ভয় উপেক্ষা করে নিজে ক্যম্পে গিয়ে আমার বাবা আওয়ামীলীগ করার কারণে যদি অপরাধি হয় আর সে কারণে ধরে নিয়ে আসা হয়। আমি ছাত্র, আমার বাবাকে ছেড়ে না দিলে আমার লিখাপড়া হবেনা। আমার বাবাকে নিয়ে যাবই। তখন এক কমান্ডার আমার পিঠে মাতরাও মাতরাও কবলে শান্তনা দেয়। পরে বাবাকে ছেড়ে দেয়। সেদিন বুঝেছিলাম দেশ স্বাধীনতার পিছনে মানুষের জীবনের বড় কষ্ট কত বেশি। এরপর ৯মাস যুদ্ধ চলার পর ৬ জানুয়ারী ভাদুরিয়া গ্রামে শত্রু বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। অনেক পাকিস্তানি হানাদাররা মৃত্যুবরণ করে সেদিক থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলায় যুদ্ধকালীন সময়ে অনেক ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিক বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরে নবাবগঞ্জ উপজেলায় গণহত্যার স্থানগুলো নির্বাচন করে পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সহ নবাবগঞ্জ উপজেলার যুদ্ধকালীন সময়ে স্মৃতিগুলো কোনভাবেই যেন মুছে যেতে না পারে সেজন্য আমরা এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পরবর্তীতে স্মৃতিফলকগুলোর আরো উন্নয়নে কাজ করা হবে বলে আশ^স্ত করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ দবিরুল ইসলাম জানান, একসময় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ থাকবেন না। সেদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্মৃতিফলকগুলো স্বাধীনতার চেতনা ধরে রাখতে হবে সহায়ক। এদিকে উপজেলা প্রশাসনে অর্থায়নে এ ৪টি স্থানে স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়েছে। উপজেলার নবাবগঞ্জ সদরে ৭১ চত্ত্বর, উপজেলার ২নং বিনোদনগর ইউনিয়নের চকদলূ গণহত্যা স্মৃতিফলক, ৮নং মাহমুদপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর গণহত্যা স্মৃতিফলক, ৬নং ভাদুরিয়া ইউনিয়নের ভাদুরিয়া যুদ্ধ স্মৃতিফলক
এদিকে এলাকাবাসীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে নবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান বর্তমান জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এস এম মাহফুজুর রহমান ডাবলু এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সন্নিবেশিত করা হলো। বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান ডাবলু বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) এর ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে যোগদান করেছেন। অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান ডাবলু বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) উপাচার্য হিসাবে ২৬ জানুয়ারী ২০২০ যোগদান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগে (১৯৮৪-২০১৯) ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাবির অর্থ বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান। তিনি জাপানের নাগোয়ার স্কুল অফ ইকোনমিক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন (১৯৯৮)। তিনি মস্কোর ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ থেকে (১৯৭২) ডক্টরেট করেছেন। এম.এস. অনার্স সহ অর্থনীতিতে, (১৯৭৯) মস্কোর পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক বিভাগের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচালক, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ব্যবসায় প্রোগ্রামের মাস্টার, সদস্য সিনেট, প্রোভাস্ট, জহুরুল হক হল, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি (২০১১-২০১৪) বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লেখা “ব্যবসায় পরিভাষা” (অভিধান) বইটি বহুল প্রচলিত ও জনসমাদৃত। তিনি অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চীন, কিউবা, জার্মানি, গ্রীস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বেশ কয়েটি দেশ পরিদর্শন করেছেন। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ২৫ শে মার্চ দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিহারা গ্রামের সরদার পরিবারে। পিতা মরহুম শফিউদ্দিন সরদার ছিলেন তৎকালিন সময়ে উচ্চশিক্ষিত বিদ্যান। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দাউদপুরে বসতি গড়েন। তিনি বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করেন।
মন্তব্য করুন