জয়পুরহাটে বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষ

Spread the love

 


ওমর আলী বাবু, জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষ হলেও, স্থানীয় ভাবে বাজার জাতের ব্যবস্থা না থাকায় কাংখিত লাভ পাচ্ছে না চাষীরা। বিদেশী ফল স্ট্রবেরি চাষ করে এখানকার কৃষকরা জীবনমান উন্নয়ন করেছে অনেকেই। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কয়েক জন কৃষক থেকে এখন প্রায় ৩শ’ কৃষক চাষ করছে স্ট্রবেরি। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নেই ২শ’ জন চাষী স্ট্রবেরি চাষ করছে।
কৃষকদের কখনো ভাবনায় ছিল না যে, জয়পুরহাট জেলার মাটিতে বিদেশী জাতের সুস্বাদু ফল স্ট্রবেরি চাষ হতে পারে। বর্তমান এ এলাকার অনেকেই স্ট্রবেরি চাষ করে এখন ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হয় প্রায় চারগুণ। স্থানীয়ভাবে খুচরা পর্যায়ে কিছু ফল বিক্রি হলেও পাইকারিভাবে স্ট্রবেরি’র বাজারজাত ব্যবস্থা না থাকায় চাষীরা তাদের কাংখিত লাভ পাচ্ছে না। এর ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার স্ট্রবেরি চাষীরা। তাই তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্ট্রবেরি বাজারজাতের জন্য প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিদেরকে একাধিক বার জানিয়েও বাজারজাত ব্যবস্থপনা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষীরা। তাদের দাবী আলু, ধান, চাল, সহ বিভিন্ন সজবির বাজারের ন্যায় যদি প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যথাযথ উদ্যোগ নেয় তাহলে চাষীদের কষ্টে অর্জিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চাঁন্দা, কালীবাড়ী মাঠে খেতের পরে খেত জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ফসলের মাঠ। আর জাল দিয়ে ঘিরে রাখা খেতের ভেতরেই কেউ করছেন স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা, কেউ সেচ দিচ্ছেন, আবার কেউ তুলছেন স্ট্রবেরি ফল।
কালীবাড়ী গ্রামের সফল স্ট্রবেরি চাষী আমিনুর বলেন, ১০ বছর আগে কৃষক আব্দুল মোমিন আমাদের এলাকায় প্রথম স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। তার সাফল্য দেখে ৬ বছর আগে দেড় বিঘা জমিতে আমিও বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। অল্প খরচে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় পরের বছর থেকে ৩ বিঘা জমিতে প্রতি বছর স্ট্রবেরি চাষ করে আসছি। স্ট্রবেরি ফল বিক্রির মাধ্যমে এরই মধ্যে সংসার থেকে অভাব দূর করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন অন্য চাষীরা আমার কাছ থেকে স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করেন। অনেকে পরামর্শও নেন। ফলে দিন দিন এলাকায় স্ট্রবেরির চাষ বেড়েই চলেছে। গত বছর এ এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করেছিলে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ জন কৃষক। এ বছর নতুন করে আরো বেশকিছু চাষীসহ প্রায় ২শ’ জন কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করেছেন।
একই এলাকার নাজির মন্ডল বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এজন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে পাঁচ-ছয়টি চাষ করে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবরসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এসব মিলে স্ট্রবেরি চাষের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় চারা সহ প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আগে লাভ বেশি হত কিন্তু বর্তমানে সার, কিটনাশক, শ্রমিকের মজুরী, সেচের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় এখন লাভ কম হচ্ছে। এরপরও সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ফল এবং চারা বিক্রি করে ১ বিঘায় ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা।
সফল স্ট্রবেরি চাষীরা শহিদুল বলেন, উইন্টারডন জাতের একটি চারাগাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ২ কেজি ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এ ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও স্থানীয়ভাবে বাজারজাতের ব্যবস্থা না থাকায় স্ট্রবেরি বিক্রি করতে সমস্যার মুখে পড়তে হয় আমাদের। এলাকায় পাইকারিভাবে স্ট্রবেরি বিক্রি করা যায় না। খাওয়ার জন্য রাস্তা পার্শ্বে ও ফেরি করে স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু বিক্রি করে ফেরিওয়ালারা। তাই জমি থেকে তোলা স্ট্রবেরি ঢাকায় আড়তদারের নিকট কমিশনে বিক্রি করি। ঢাকার মহাজনরা আমাদের কাছ থেকে বাকিতে নিয়ে সেই স্ট্রবেরি বিক্রি করার পরে টাকা দেয়। কোনো কারণে ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই স্ট্রবেরি নষ্ট হলে গেলে এতে লোকসান হয়। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্ট্রবেরি ক্রয়-বিক্রয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জোর জানায়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কায়ছার ইকবাল বলেন, জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৩শ’ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। স্ট্রবেরি চাষের পুরো কৃতিত্বই কৃষকদের। কারণ কৃষকরা নিজ উদ্যোগে স্ট্রবেরি চাষ করেছে। কৃষকরা লাভজনকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন, সেজন্য কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ সেবা দেওয়া হয়। আর আমাদের যারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছে, তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে মাঠে থেকে তদারকি করে। আমরাও মাঝে মাঝে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মাঠে যাই।


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।