পোষাক নিয়ে কিছু কথা ।

Spread the love

সম্পাদকীয় ।

ইসলামী পোশাক নিয়ে মাঝে মধ্যে বিতর্ক ওঠে। সাধারণ একটি ধারণা রয়েছে যে, পুরুষদের ইসলামী পোশাক হলো জোব্বা বা পান্জাবী !   না, জোব্বা বা পান্জাবী ইসলামী পোশাক নয়। কারণ, রাসূল সা:-এর সময় আরবের আবু জেহেল, আবু লাহাবদের পোশাক ছিল জোব্বা বা পান্জাবী । তারাও জোব্বা বা পান্জাবী পরিধান করতেন। আবার রাসূল সা: ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামগণও জোব্বা বা পান্জাবী পরতেন। জোব্বা বা পান্জাবী আরবের আদত বা প্রথা। তৎকালীন আরবে জোব্বা বা পান্জাবী ছিল সামাজিক লোকাচার। জানতে হবে, কোনটা আদত, আর কোনটা ইবাদত। জ্ঞান আর মুক্তচিন্তা অভাবের কারণে, কিছু হুজুর আদত ও ইবাদতকে একাকার করে ফেলেছেন। রাসূল সা: এবং সাহাবায়ে কেরামদের যুগে এমন একটিও দৃষ্টান্ত বা ঘটনা পাওয়া যাবে না যে, কোনো মুশরিক ইসলাম গ্রহণের পর তার পূর্বের পোশাক বদলিয়ে নতুন করে জোব্বা বা পান্জাবী পরিধানের কথা বলতে বলা হয়েছে। কিংবা ইসলামী পোশাকের নামে তাকে একটি জোব্বা বা পান্জাবী দেয়া হয়েছে।

পরবর্তীকালে সাহাবায়ে কেরামরা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের হাতে শত, শত, হাজার, হাজার অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কোনো একটি দেশেও এমন একটি ঘটনা পাওয়া যাবে না যে, সে দেশের অমুসলিম ইসলাম গ্রহণের পর, তাকে পূর্বের পোশাক পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। কিংবা, তথাকথিত, সুন্নতি পোশাকের নামে তাকে জোব্বা বা পান্জাবী পরতে বলা হয়েছে।  প্রশ্ন হলো, পুরুষদের যদি সুন্নতি পোশাক থাকে, তাহলে মহিলাদের সুন্নতি পোশাক কী? অর্থাৎ, পুরুষদের যদি সুন্নতি পোশাক থাকে,তাহলে মহিলাদের সুন্নতি পোশাক নেই কেন?কারণ, একটাই। তা হলো, ইসলাম একটি সর্বজনীন জীবনবিধান। এই জীবনবিধান, সব দেশের, সব মানুষের, সব আবহাওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি জীবনবিধান। মানুষ তার দেশের আবহাওয়া ও লোকাচারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক পরিধান করবে এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতাই ইসলামের একটি বিশেষ দিক।

পোশাকের ব্যাপারে রাসূল সা: বলেন, আমর ইবনে শোয়াইব থেকে তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো, দান-খয়রাত করো, কিন্তু অপচয় ও অহঙ্কারী পোশাক পরিধান করো না।’ (নাসায়ি, খণ্ড ৫, পৃ : ৫৯, হাদিস ২৫৫৯)

পোশাকের ব্যাপারে রাসূল সা:-এর নির্দেশনা :

১মত, পুরুষেরা নারীদের এবং নারীরা পুরুষদের পোশাক পরিধান করতে পারবে না। এ ব্যাপারে রাসূল সা: অভিশম্পাত দিয়ে বলেন, ‘অভিশম্পাত ওই পুরুষকে যে নারীদের মতো পোশাক পরিধান করে, অভিশম্পাত ওই নারীকেও যে পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪০৯৮)

  পোশাকের এ দিকটিতে ইঙ্গিত করে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধি লাভের আশায় পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরিয়ে দেবেন। এরপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস ৪০২৯)

রসুল (সা.) বলেন, মহিলাদের মধ্য থেকে যারা পুরুষের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং পুরুষের মধ্য থেকে যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তাদের ওপর তিনি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিশাপ দিয়েছেন।এমন পোশাক পরা যাবেনা যাতে খ্যাতি অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়, সবার কাছে প্রসিদ্ধ হওয়া উদ্দেশ্য হয়। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি খ্যাতি অর্জনের জন্য পোশাক পরিধান করে তাহলে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।’পুরুষের লেবাস টাখনু গিরার নিচে যাওয়া হারাম। আর মহিলাদের লেবাস টাখনু গিরা ঢেকে থাকবে। পুরুষের লেবাস টাখনু গিরার  নিচে গেলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না।

 

২য়ত, ভিন্ন ধর্মীয় পুরোহিতদের অনুকরণে পোশাক : যে পোশাক পরলে, ভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্ব   লোক মনে হয়, সে ধরনের পোশাক পরতে রাসূল সা: কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন : হিন্দু পুরোহিতদের, বৌদ্ধ পুরোহিতদের, খ্রিষ্টান পুরোহিতদের ইত্যাদি,

৩য়ত , অহংকার আল্লাহ তায়ালার চাদর। তাই, যে পোশাকে অন্তরে অহঙ্কারের ব্যাধি পয়দা হয় যে আমি একজন বিশেষ সম্প্রদায় সে পোশাক পরা যাবে না। 

৪র্থত, যে টাইটফিট পোশাকে নারীদের শরীরের অবয়ব প্রকাশিত হয়, সে পোশাক নারীরা পরতে পারবে না। অনুরূপভাবে পুরুষরাও টাখনুর নিচে প্যান্ট বা পায়জামা পরতে পারবে না।

৫মত, পোশাকের মাধ্যমে সতর ঢাকা : আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক। তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দোষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যের উপকরণ। বস্তুত, তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোত্তম।’ সূরা আরাফ, আয়াত ২৬। পুরুষদের নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং মহিলাদের পুরো শরীরই সতর। এই সতর ঢেকে রাখা ফরজ। পোশাকের উদ্দেশ্য হলো সতর ঢাকা। যে পোশাকে সতর ঢাকা হয় না, সে পোশাক, পোশাকই নয়।

পোশাক হিসেবে প্যান্ট, শার্ট, টাই -এগুলোর সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। এ নিয়ে জ্ঞানী মুসলিমদের মধ্যে কোন মতভেদও নেই। আর কেউ মতভেদ করলেও এগুলো সুন্নতি পোশাক হবার ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটবে না।

কিছু শর্ত সাপেক্ষে দুনিয়ার সকল পোশাকই ইসলামী পোশাক! যেহেতু ইসলাম সারা দুনিয়ার ধর্ম তাই, জলবায়ূ, তাপমাত্রা, স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে পোষাক বিভিন্ন ডিজাইনও হতে পারে।

ক) সুন্দর ও পবিত্র-পরিচ্ছন্ন পোশাক। খ) ছতর আবৃত করে এমন পোশাক। গ) টাখনুর উপরে পরিহিত পোশাক। ঘ) নিষিদ্ধ নয় এমন পোশাক। যেমন-রেশমি পোশাক, সোনা খচিত পোশাক   ১) পো ষাক পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে। ( সুনানে তিরমিজি,৫/১১০)।

২) পোষাক পাতলা ও আটোসাটো হবে না। ( হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৫/১৩৬, এই পৃঃ দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৫/১৫৭, ইবনু সাদ, আত তাবাবাত, ৫/১৯১, ৩২৮) ।

৩) পুরুষরা মেয়েদের পোষাক ও নারীরা পুরুষের পোষাক পরতে পারবে না। (আবু দাউদ, ৪/৬০, মুসনাদে আহমাদ, ২/৯৫৬)।

৪) পোষাক অহংকারী হতে পারবে না। ( আবু দাউদ, ৪/৪৩, ইবনে মাজাহ, ২/১১৯২, ১১৯৩)। পুরুষরা রেশমি পোষাক পরতে পারবে না। (নাসাঈ, ৮/১৬১, বুখারি, ৫/২২০২, সহিহ মুসলিম, ৩/১৬৩৫, বুখারি, ১/৩০২, ৫/২১৯৪)।

৫) পোষাক টাকনুর নিচে যাবে না। (বুখারি, ৫/২১৮২, আবু দাউদ, ৪/৫৯,বুখারি।

 


Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।