সম্পাদকীয়।
দোয়া হচ্ছে ইবাদাত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- যার অর্থঃ তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদাতে তাকব্বরী করবে অতিসত্বর তাদেরকে কষ্টদায়ক জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আরোও বলা হয়েছে- যখন আমি মানুষকে নিয়ামত দান করি তখন সে আমাহতে নিজেকে দুরে ফিরিয়ে নেয়। আর যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দোয়া প্রার্থনা করতে থাকে।(সুরা হা-মিম সেজদাহ, আয়াত ১৫।
এ আয়াতে তাফসীরে মাওলানা সাব্বির আহমাদ ওসমানী বলেছেন, ওদের লজ্জাও নাই ওরা বিপদে পড়লে কোন মূখে দু”হাত তুলে দোয়া প্রার্থনা করে। উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে মহানবী (সাঃ) বলেছেন-
হযরত আনাছ বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- দোয়া এবাদতের মগজ সাদৃশ। (তিরমিজি মুল ১৭৩পৃঃ)
মহানবী (সাঃ) দোয়া ও ইবাদাত, এই মর্মে দলিল হিসাবে আরও ইরশাদ করেছেন- যার অর্থ: হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে দোয়াও ইবাদাত। অতঃপর তিনি দলিল হিসেবে কুরআন শরীফের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন যার অর্থঃ তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। আমার ইবাদাত থেকে যারা তাকাব্বরী করবে অতিসত্বর তাদেরকে কষ্টদায়ক জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (আহামাদ, আবু দাউদ,নাসাঈ, ইবনে মাজাহ,তিরমিজি,মূল- ১৭৩)
এর পরেও কেই যদি দোয়াকে বেদায়াত বলে এ প্রসঙ্গে বলব আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) দোয়াকে ইবাদাত বলেছেন। কেই যদি ইহাকে বেদায়াত বলে, তবে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) কে বেদায়াতি বলা হবে। (নাউজুবিল্লাহ) তার ঈমান থাকবেনা। দোয়াকে বেদায়াত মনে করে কেউ যদি উহার প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা করে তবে সে মোতাকাব্বোরনের অর্ন্তভুক্ত। এবং ত্র জন্যে জাহান্নাম অপেক্ষা করতেেেছ।
আজকাল হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু লোক মহানবী (সাঃ) এর সহীহ হাদিসকে জাল হাদিস বলে মিথ্যা আরোপ করছে।অথচ তারা রাসুল (সাঃ) এর হাদিস সম্পর্কে কিছুই জানেনা ।
হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমার পক্ষ থেকে হাদিস বর্ণনার ব্যাপারে সাবধান থাকবে, যে পর্যন্ত না তোমরা তা আমার হাদিস বলে জানবে। কেননা যে ব্যাক্তি জেনে শুনে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে তৈরী করে নেয় । (তিরমিজি)
অর্থ: হযরত ছাওবান রদ্বিযাল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ইমাম সাহেব মুক্তাদীগনকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দোয়া করবে না। যদি সে তা করে, তবে সে মুক্তাদীগনের প্রতি খেযানতকারী হবে।”
দলীল-
√ তিরমিযী শরীফ ২য খন্ড ৪৭ পৃষ্ঠা।
দেখুন উক্ত হাদীস শরীফে ইমামদের উদ্দেশ্য বলা হযেেছ তারা যেন মুক্তাদীদের বাদ দিয়ে একা একা দোয়া না করে। যেহেতু ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয় সেহেতু ইমামের প্রতি আদেশ মুক্তাদীদের নিয়ে সম্মিলিত ভাবে দোয়া/মুনাজাত করবে। আর ইমাম মুক্তাদীর সম্মেলন যেহেতু ফরজ নামাজের সময় হয় সেহেতু ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত দোয়া করাটা উক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো।
দু’হাত তুলে দোয়া মুনাজাত।
সব ইবাদাতের নিয়ম মহানবী (সাঃ) বলে দিয়েছেন। তা না হলে কি করে মানূষ ইবাদত করত? এমন কি পেশাব পায়খানার নিয়ম পযন্ত বলে দিয়েছেন। আর দোয়াকে ইবাদত ঘোষনা দিয়ে তার নিয়ম বলেননি এমন হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) দু’হাত তুলে দোয়া মুনাজাতের পরিস্কার নিয়ম বলে দিয়েছেন এবং বাস্তবে নিজে তা কার্যকরী করে দেখিয়েছেন। এবং এরশাদ করেছেন- (হাদীসের অর্থ) হযরত মালেক ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল(সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা আল্লাহর নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করবে, তখন তোমাদের হাতের পেটের দিক দিয়ে দু’হাত উঠায়ে প্রার্থনা করবে, পিঠের দিক দিয়ে দু’হাত উঠায়ে করবেনা। আরও হযরত ইবনে আব্বাছ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুল(সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট তোমরা তোমাদের হাতের পেটের দিক দিয়ে দু’ হাত উঠায়ে প্রার্থনা কর।দু’হাত পিঠের দিক দিয়ে উঠায়ে প্রার্থনা কর না।তারপর যখন তোমরা দোয়া শেষ করবে তখন তোমরা দু’হাত দ্বারা তোমাদের মুখ মন্ডলী মাসেহ করবে। (আবু দাউদ মূল:২২৫)
এছাড়াও হযরত উমর (রাঃ)এর বর্ণিত হাদিসে আছে- হযরত উমর(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল(সাঃ) দোয়া করার সময় দু’হাত উঠাতেন, দোয়া শেষে মূখমন্ডলী মাসেহ না করা পর্যন্ত দু’হাত নামাতেন না। (তিরমিজি মূল: ১৭৪)
হযরত সাযবি ইবনে ইযাজিদ রদ্বিযাল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, নিশ্চযই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম তিনি যখন দোয়া করতেন, তখন উভয হাত মুবারক উঠাতেন। অতঃপর (মুনাজাত শেষে) উভয় হাত মুবারক দ্বারা নিজ মুখমন্ডল মাসেহ করতেন।”
দলীল-
মিশকাত শরীফ ১৯৬ পৃষ্ঠা।
বায়হাক্বী শরীফ।
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পেলাম যখনই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন তখন দুই হাত মুবারক তুলে দোয়া করতেন এবং মুখমন্ডল মুবারক মাসেহ করতেন। সকল দোয়াতে হাত তুলে দোয়া করা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত এটা উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত হলো।
হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ)বর্ণনা করেন মহানবী(সাঃ) দোয়ার সময় দু’খানা হাত এতটুকু তুলে দোয়া করতেন যে, আমি তার দু-বগলের শুভ্রতা বা ফর্সা রং দেখতে পেয়েছি। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,নবী (সাঃ)দু’খানা হাত তুলে দোয়া করেছেন। ইয়া আল্লাহ! খালেদ যা করেছে, আমি সেজন্য আপনার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করছি।অন্য এক সুত্রে আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) উভয় হাত এতটুকু তুলে দোয়া করতেন, যে আমি তার দু’বগলের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। (বুখারী২য়, মূল-৯৩৮পৃঃ)
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল ও দাতা। তার কোন বান্দা তার নিকট দু’হাত উঠালে তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।(আবু দাউদ, বায়হাকি, তিরমিজি মূল :১৯৫)
অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বরেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন তাকদীর দোয়া ব্যতীত অন্যকিছু রোধ করতে পারেনা এবং বয়স নেকী ব্যতীত অন্যকিছু বৃদ্ধি করতে পারেনা (তিরমিজি মূর: ১৯৫)
ফরজ নামাজের পর সন্মিলিতভাবে দোয়া ও মুনাজাতঃ
এবিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে হাদিস গুলো তুলে ধরা হলো,
* হযরত আবি উবামা (রাঃ) হতে বর্নিত আছে ,তিনি বলেন নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোন দোয়া সবচেয়ে বেশী কবুল হয়? তিনি বলেন, শেষ রাতের দোয়া ও ফরজ নামাজের পর দোয়া সবচেয়ে বেশী কবুল হয়।( তিরমিজি মূল ঃ ১৮৮ পৃঃ
*আসওয়াদ আমেরী তার পিতা হতে বর্ননা করেন এবং বলেন যে, আমি নবী (সাঃ) এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করলাম, যখন নবী করিম (সাঃ) সালাম ফিরালেন তখন তিনি ঘুরে বসলেন এবং দু’হাত উঠালেন ও দোয়া করলেন।( ফতোয়ায়ে নাজিরিয়িা ১মখন্ড,পৃঃ ২৬৫)
* মোহাম্মাদ বিন ইয়হিয়া আসলামী হতে বর্নিত, তিনি বলেন যে, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কে দেখলাম তিনি এক লোককে নামাজ শেষ করার পূর্বেই দ’হাত তুলে মোনাজাত করতে দেখলেন। যখন লোকটি নামাজ শেষ করলেন তখন হযরত জোবায়ের (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজ শেষ নাকরে দু’হাত উঠাতেন না।(রেজালুহু ছেকাতুন, তোহফা ২য়, পৃঃ ২০০)
* হযরত হাবিব বিন মুসলেমাতুল ফাহারী (রাঃ) থেকে বর্নিত ,তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে যখন কোন দল একত্রিত হয়ে একজন দু’য়া করে এবং বাকি সকলে আমিন আমিন বলে, তখন আল্লাহ পাক তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করেন। (তাবরানী)
* হযরত সাওবান (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিন কাজ কাহারও জন্য জায়েজ নহে। যে ব্যক্তি মানুষের ইমামতি করবে অথচ তাদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দোয়া করবে। যদি সে ইহা করে তা’হলে সে তাদের সাথে বিশ^াসঘাতকতা করল। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
* হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, যে নবী (সাঃ) বর্ননা করেন যে কোন বান্দাহ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তার দুই হাত উত্তোলন করে তখন আল্লাহ পাক তার দুহাত খালি ফিরিয়ে দেন না। (ফতোয়ায়ে নাজিরিয়া, ২৬৫)
* হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ননা করেন যে, হুজুর পাক (সাঃ) সালাম ফিরানোর পর কিবলামূখী হয়ে দু’হাত উত্তোলন করেছেন। (ইবনে কাছির-ফতওয়ায়ে নাজিরিয়া ২৬৫)
* হযরত আসওয়াদ বিন আমের তার পিতা থেকে বর্ননা করেন, আমি হুজুর (সাঃ) এর সাথে ফজরের নামাজ পড়েছি, অতঃপর নামাজ শেষে তিনি ঘুরে বসেন এবং দু’হাত তুলে দোয়া করেছেন।
মন্তব্য করুন